Skip to content

কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা

কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা

কবুতরের রোগ কেন হয়?

কবুতর একটি শৌখিন পোষাপ্রাণী যা আমরা শখের বশে, ব্যাবসায়িক ভাবে কিংবা বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করানোর জন্য পালন করি। এসব ছাড়াও কবুতরের মাংস ও আমাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। এই কবুতরও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় যার মূল কারণ হলো বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাক।আজ আমরা কবুতরের রোগ সমূহের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং সকল রোগের প্রতিরোধ পদ্ধতি জানবো যার মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার কবুতরটির সর্বোত্তম যত্ন নিশ্চিত করা।

কবুতরের বিভিন্ন রোগ সমূহের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কবুতর প্রধানত যেসব রোগে আক্রান্ত হয় তা হলো- রাণীক্ষেত, পক্স বা বসন্ত রোগ, সালমোনেলোসিস রোগ, হেপাটাইটিস রোগ, রক্ত আমাশয় রোগ, ক্যাঙ্কার রোগ, এসপারজিলোসিস রোগ এবং মাইক্রোপ্লাজমোসিস রোগ ইত্যাদি।চলুন জেনে যাক এসব রোগের কারণ, লক্ষণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ পদ্ধতি –

আরোও পড়ুনঃ একুরিয়ামের মাছের রোগ ও চিকিৎসা

রাণিক্ষেত রোগ

  • কবুতরের রাণীক্ষেত রোগটি একটি ভাইরাসবাহিত  সংক্রামক রোগ।
  • এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস কবুতরের শ্বসনতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পৃক্ত অঙ্গগুলোকে আক্রমণ করে।
  • রাণীক্ষেত রোগ কবুতরের মাধ্যমে অথবা আক্রান্ত কবুতরের যত্ন নেওয়া ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
কবুতরের সকল রোগের ঔষধের নাম

রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ

  • রাণীক্ষেত রোগ সংক্রমণের ফলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাই হা করে নিশ্বাস নেয়,যা স্বাভাবিক কবুতর করেনা।
  • পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণের ফলে সবুজ রঙের অথবা সাদা চুনের মতো পাতলা মলত্যাগ করে।
  • স্নায়ুতন্ত্রে সংক্রমণের ফলে ঘাড় বেঁকে যায় কিংবা প্যারালাইজড হয়ে যায়।
  • খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয় এবং নিস্তেজ হয়ে শুধু ঝিমায় অথবা কোথাও স্থির হয়ে বসে থাকে।

রাণীক্ষেত রোগের চিকিৎসা

  • রাণীক্ষেত রোগ প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ করা অনেক সহজ।
  • আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ বুঝতে পারা মাত্রই আক্রান্ত কবুতরটিকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
  • রাণীক্ষেত রোগের টিকা দিতে হবে।যদিও রাণীক্ষেত রোগের জন্য চিকিৎসা তেমন কাজে দেয়না।

বসন্ত রোগ

  • কবুতরের সব কয়েকটি রোগের মাঝে কবুতরের বসন্ত বা পক্স রোগ অন্যতম।
  • এটি একটি ভাইরাসবাহিত রোগ।
  • মশার কামড়ের মাধ্যমেও এই রোগ হতে পারে।
  • সংক্রমিত খাবার,পানি খাওয়ানোর দ্বারাও কবুতরের বসন্ত রোগ ছড়াতে পারে।

লক্ষণ

  • কবুতরের শরীরের পালকহীন বিভিন্ন অংশ যেমনঃ চোখের চারপাশ,মুখের চারপাশ,পা ইত্যাদি জায়গায় ফোস্কা বা গুটি দেখা যায় যা পরবর্তীতে ক্ষত হয়।
  • খাবার গ্রহণে অনীহা দেখা যায়।নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় এবং ঝিমাতে থাকে।

চিকিৎসা

  • কবুতরের বসন্ত রোগ হলে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
  • পিজিয়ন পক্স ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হবে।
  • পটাশ মিশ্রিত পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান মুছে দিতে হবে দিনে দুইবার।

আরোও পড়ুনঃ গাপ্পি মাছের বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা

সালমোনেলোসিস রোগ

  • কবুতরের সালমোনেলোসিস রোগ একটি ব্যাকটেরিয়াবাহিত সংক্রমণ।
  • এই রোগে আক্রান্ত কবুতরের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে পাশাপাশি এটি মানুষের জন্যও সংক্রামক। 
  • সালমোনেলোসিস রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া কবুতরের অন্ত্রে আক্রমণ করে, মারাত্মক ক্ষতি করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশকে সংক্রমিত করতে পারে।  ।
  • সালমোনেলোসিস রোগ কবুতরের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এবং ক্ষুধা হ্রাস করে।
  • এই রোগের জন্য প্রধানত দায়ী হলো  সংক্রমিত খাদ্য, পানীয় জল এবং মল-মূত্র।

লক্ষণ

  • পা ও পাখনার গোড়া ফুলে যাওয়া, ব্যাথা কিংবা প্যারালাইজড হতে পারে।
  • আক্রান্ত কবুতর অস্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করবে।
  • উড়ার ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিকতা দেখা যাবে। 
  • অন্ত্রে সমস্যার জন্য  ক্ষুধা কমে যাবে।
  • আক্রান্ত কবুতরের ওজন হ্রাস পাবে, চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে।
  • জেলির মতো হলুদ বা সবুজ পাতলা মলত্যাগ করবে।
  • ডায়রিয়া হয়।

চিকিৎসা

  • কবুতরের সালমোনেলোসিস রোগ হলে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
  • কবুতরকে পরিষ্কার পাত্রে খাবার দিতে হবে।
  • ভিটামিন বি সমৃদ্ধ ঔষধ সরবরাহ করতে হবে।

ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস রোগ

  • কবুতরের ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস বা আইবিএইচ রোগ ছোঁয়াচে বা  সংক্রামক রোগ।
  • সাধারণত হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত কবুতরের বমি এবং পায়খানার সাহায্যে অন্য ভালো কবুতরও সংক্রমিত হতে পারে।
  • এই রোগে আক্রান্ত কবুতর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মারা যায়।

হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ

  • দুর্গন্ধযুক্ত সবুজ,বাদামি বা খয়েরী পায়খানা করবে।
  • আক্রান্ত কবুতরের খাবার প্রতি অনীহা কাজ করবে।
  • খাবার গ্রহণ না করায় দুর্বল হয়ে যাবে,শুকিয়ে যাবে।
  • কোথাও স্থির হয়ে বসে থাকবে কিংবা ঝিমোবে।
  • আক্রান্ত কবুতর প্রচুর পরিমানে বমি করবে।

হেপাটাইটিস রোগের চিকিৎসা

  • কবুতরের ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস রোগের কোনো চিকিৎসা নেই ফলে আক্রান্ত কবুতরকে দল থেকে আলাদা রাখতে হবে।
  • আলাদা না রাখলে আক্রান্ত কবুতরের বমি ও মল দ্বারা অন্য কবুতরও আক্রান্ত হবে।

আরোও পড়ুনঃ বিভিন্ন জাতের গাপ্পি মাছের দাম ও চেনার উপায়

রক্ত আমাশয় রোগ

  • কবুতরের রক্ত আমাশয় বা কক্কিডিওসিস রোগ হলো একটি পরজীবীবাহিত রোগ।
  • এই রোগটি পরিপাকতন্ত্রকে সংক্রমণ করে, যার ফলে কবুতরের খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়।
  • কবুতরের রক্ত আমাশয় রোগের প্রধান কারণ হিসেবে বলা যায় খাবারের বিষক্রিয়া তাই কবুতরকে সবসময় ভালো মানের খাবার দিতে হবে।
  • সংক্রমিত কবুতরের ত্যাগকৃত মল কিংবা ইনজেকশনের দ্বারা অন্য কবুতরকে সংক্রমণ করে।

লক্ষণ

  • আক্রান্ত কবুতরের খাবার প্রতি অনীহা লক্ষ্য করা যায়।
  • ওজন হ্রাস পায়,চেহারা ভেঙে যায়।
  • আক্রান্ত কবুতর রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে।

চিকিৎসা

  • আক্রান্ত কবুতরটিকে আলাদা করতে হবে।
  • কবুতরের রক্ত আমাশয় হলে সালফারজাতীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।

ক্যাঙ্কার রোগ

  • কবুতরের ক্যাঙ্কার রোগ হলো একটি পরজীবীবাহিত রোগ যাকে ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগ ও বলা হয়। 
  • কবুতরের এই রোগটি ট্রাইকোমোনিস গ্যালিন (Trichomonis gallinae) নামক পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট।
  • এই পরজীবী সাধারণত পরিপাকতন্ত্রের শুরুর দিকের অঙ্গ  (যেমনঃ মুখ, গলা) অঙ্গগুলোকে আক্রমণ করে।
  • ক্যাঙ্কার রোগ আক্রান্ত পিতামাতা খাবার খাইয়ে দিলে কিংবা অপরিষ্কার পাত্রে পানি/খাবার খেতে দিলে আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ

  • ক্যাঙ্কার রোগ হলে কবুতরের মুখ,গলায় সংক্রমণ হয় ফলে খাবার খেতে অনীহা লক্ষ্য করা যায়।
  • ওজন কমে যায়,চেহারা নষ্ট হয়ে যায়।
  • কবুতরের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে।

চিকিৎসা

  • কবুতরের ক্যাঙ্কার রোগ হলে 10% Tricho Cure+ ব্যবহার করতে পারেন।
  • প্রতি ২/৩ লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম তুঁতে মিশিয়ে কবুতরকে দিতে পারেন।
  • এছাড়াও  10% রোনিডাজল+ বা মেট্রোনিডাজল ব্যবহার করলেও ফল পাওয়া যাবে।
  • রোনিডাজল শুধু ক্যাঙ্কার রোগ নিরাময় করে না পাশাপাশি কবুতরকে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।

আরোও পড়ুনঃ বিভিন্ন জাতের গোল্ডফিশের দাম ও চেনার উপায়

এসপারজিলোসিস রোগ

  • কবুতরের এসপারজিলোসিস রোগ একটি ছত্রাকবাহিত রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী ছত্রাক হলো Aspergillus fumigatus.
  • এসপারজিলোসিস রোগটি সাধারণত ৭-৪০ দিন বয়সের বাচ্চাতে বেশী দেখা যায়।এই রোগের সুপ্তিকাল ২-৫ দিন।
  • এসপারজিলোসিস রোগটি কবুতরের শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে।

লক্ষণ

  • আক্রান্ত কবুতর হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে নিশ্বাস নেয়।
  • খাবারে অনীহা থাকে ফলে দুর্বল হয়ে ঝিমায়।
  • অতিরিক্ত পিপাসা লাগে তাই বেশী বেশী পানি পান করে।

চিকিৎসা

  • কবুতরের এসপারজিলোসিস রোগের তেমন চিকিৎসা নাই।
  • ছত্রাকনাশক মেডিসিন ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যাবে।তুঁতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • যেকোনো ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ

  • মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ মূলত শ্বাসনালী তে সংক্রমণ যা বিভিন্ন ধরনের হয়।
  • মাইকোপ্লাজমোসিস হলো ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংমিশ্রণে সৃষ্ট রোগ, যা এটিকে বিপজ্জনক করে তোলে।
  • কবুতরের এই রোগের জন্য প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় সংক্রমিত খাদ্য, পানীয় জল, মল এবং ব্যবহৃত সরঞ্জাম।

লক্ষণ

  • নাক দিয়ে জেলির ন্যায় তরল বের হয়।
  • নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
  • গলায় জ্বালাপোড়া হয়।
  • নড়াচড়া বা উড়তে ইচ্ছে হয়না।
  • অস্বাভাবিক চলাফেরা লক্ষ্য করা যায়।

চিকিৎসা

  • কবুতরের এই রোগ হলে ভালো পশুডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

আরোও পড়ুনঃ একুরিয়ামের মাছের খাবার ও যত্ন নেওয়ার উপায়

কবুতরের রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি

  • পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ঢুকবে এমন শেডে কবুতর রাখতে হবে।
  • প্রত্যেকটি কবুতরকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখার জন্য সময়মতো বিভিন্ন টিকা প্রদান করতে হবে যেমনঃ রাণীক্ষেত রোগের টিকা ডিম সরবরাহের অন্তত ০৩ মাস আগে দিতে হবে।
  • কবুতরের রোগ বাচ্চা বয়সেই বেশী হয়,তাই নতুন জন্ম নেওয়া  বাচ্চাগুলোকে সতর্কতার সাথে রাখতে হবে।
  • নতুন কবুতর যোগ করার ক্ষেত্রে সুস্থ ও রোগমুক্ত কবুতর নির্বাচন করতে হবে।
  • বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে কবুতরকে গোসল করিয়ে নেয়া ভালো।কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
  • জীবাণুমুক্ত ও ভালো মানের খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে।
  • কবুতরের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও জীবাণুমুক্ত হওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
  • নিয়মিত কবুতরের মল ও উচ্ছিষ্ট খাবার শেডের খোপ থেকে পরিষ্কার করতে হবে।
  • অসুস্থ হওয়ার লক্ষণ পাওয়া জীবিত বা মৃত কবুতরকে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।

রেফারেন্স

বই- কবুতর পালন পদ্ধতি

ছবি- আনস্প্ল্যাশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Home

Home

Home

Home

Home