একুরিয়ামের মাছের খাবার এবং খাবার দেওয়ার নিয়ম

একুরিয়ামের মাছের খাবার এবং খাবার দেওয়ার নিয়ম

একুরিয়ামের মাছের খাবার

বাসা বাড়ি কিংবা অফিসে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য অনেকেই একুরিয়াম ব্যাবহার করেন।মূলত এই শোভাবর্ধনের জন্য একুরিয়ামের বাহারি মাছই দায়ী।মাছ তাদের খাদ্য নিজেরা তৈরী করতে পারেনা। আর আপনি যেহেতু এই অবলা প্রাণীদের দায়িত্ব নিয়েছেন তাই এই মাছগুলোকে ভালো রাখাটাও আপনার দায়িত্ব। মাছকে ভালো রাখার জন্য প্রধান যে জিনিস সেটা হলো একুরিয়ামের মাছের খাবার।

আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়ই হলো একুরিয়ামের মাছের খাবার, একুরিয়ামের মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম

একুরিয়ামের মাছ কেমন খাবার খায়?

  • একুরিয়ামের মাছ সাধারণত ভালো মানের ও সহজে খাওয়া সম্ভব এমন সব খাবারই খেতে পছন্দ করে।
  • একুরিয়ামের মাছ প্রক্রিয়াজাত শুকনো খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ন্যাচারাল ফুড বা জীবন্ত খাবার ( যেমনঃ এলগি, ফাইটোপ্লাংকটন, জুওপ্লাংকটন, ডাফনিয়া, মশার লার্ভা, চিংড়ি মাছ এমনকি মাছের ফ্রাই) খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে।
  • একুরিয়ামের মাছ  কোনো বিষাক্ত খাবার খায়না।

একুরিয়ামের মাছের খাবার ধরণ

একুরিয়ামের মাছের খাবার দুই ধরণের। সেগুলো হলো-
১. ন্যাচারাল ফুড- প্রাকৃতিক খাবার
২. প্রসেসড ফুড- প্রক্রিয়াজাত খাবার

একুরিয়ামের মাছের খাবার
ছবিঃ একুরিয়ামের মাছের খাবার

এখানে একুরিয়ামের মাছের ন্যাচারাল ও প্রসেসড ফুড নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আরোও পড়ুনঃ কীভাবে একুরিয়ামের যত্ন নিলে আর মাছ মরবেনা

ন্যাচারাল ফুড- প্রাকৃতিক খাবার

  • ন্যাচারাল ফুড বা প্রাকৃতিক খাবারের মধ্যে বিভিন্ন এলগি, জুওপ্ল্যাঙ্কটন, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, বিভিন্ন পোকামাকড়, উদ্ভিদের অংশ, আর্টিমিয়া, ড্যাফনিয়া, ব্রাইন শ্রিম্প, মশার লার্ভা, স্নেইল, কেঁচো, পিঁপড়ার ডিম এবং টিউবিফেক্স ইত্যাদি।

এসবের মাঝে প্রধান কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা হলো-

ড্যাফনিয়া

  • বলতে গেলে, ড্যাফনিয়া প্রায় সব ধরণের  জীবন্ত খাবারের মাঝে নিরাপদ খাবার
  • ড্যাফনিয়া’র পুষ্টিগুণও অনেক ভালো।
  • একুরিয়ামের সব জাতের মাছই ড্যাফনিয়া খায়।
  • ড্যাফনিয়া চাষ করাও অনেকটা সহজ, অনেকগুলো কালচার মিডিয়ামে গ্রীণ ওয়াটার এবং সোর্স ফুড দিলেই হয়ে যায়।
একুরিয়ামের মাছের খাবার

মশার লার্ভা-

  • মশার লার্ভা খুবই সহজলভ্য এবং একুরিয়ামের মাছের খুবই পুষ্টিকর খাবার।
  • একুরিয়ামের ঢাকনা খোলা থাকলেই অনেক মশার লার্ভা হয় একুরিয়ামের পানিতে।
  • এছাড়াও আপনি চাইলে বাসার ছাদ, বারান্দা কিংবা যেখানে সেখানে কোনো কিছুতে পানি রাখলেই অনেক লার্ভা পাওয়া যায়।যদিও তা বিপদজনক কেননা অনেক মশাবাহী রোগ ( যেমন ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ) ছড়াতে পারে।

টিউবিফ্লেক্স

  • বাজারের টিউবিফেক্স একদম কিনবেননা কেননরা এসব পুষ্টিকর হলেও নিশ্চিতভাবে অভন্তরীণ পরজীবি দ্বারা সংক্রমিত থাকে।
  • যার ফলে আপনার মাছ পরজীবি সংক্রমিত রোগে আক্রান্ত হবে। অভ্যন্তরীণ পরজীবি সংক্রমণের চিকিৎসা খুবই ঝামেলাপূর্ণ।
  • ঘরে টিউবিফ্লেক্স চাষ করা নিরাপদ তবে শতভাগ পরজীবিমুক্ত হবে এমন নাহ।

আরোও পড়ুনঃ একুরিয়ামের মাছের বিভিন্ন রোগ এবং চিকিৎসা

ব্রাইন শ্রিম্প বা চিংড়ি

  • ব্রাইন শ্রিম্প বা চিংড়ি সবচেয়ে ভাল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এবং সহজ লাইভ ফুড।
  • ডিম থেকে চিংড়ি ফুটানোও অনেক ইজি, শুধু লবণাক্ত পানির পাত্রে এয়ারফ্লো চালিয়ে চিংড়ির ডিম দিয়ে ৩৬-৪৮ ঘন্টার মাঝে সব ডিম ফুটে চিংড়ি আসবে।এখানে কালচার মিডিয়ায় প্রস্তুত করার ঝামেলা কিংবা পরজীবি সংক্রমণের বিষয় নাই বললেই চলে।
  • চিংড়ির ডিম সবসময়ই শুকনো জাগয়ায় রাখবেন নাহলে নষ্ট হয়ে যাবে অর্থাৎ ওইসব ডিম থেকে আর চিংড়ি আসবেনা।

এসব খাবারগুলো আবার ফ্রিজে রেখেও ড্রাই ফুড হিসেবে সংরক্ষণ অনেকদিন করে খাওয়ানো যায়।

প্রসেসড ফুড- প্রক্রিয়াজাত খাবার

  • একুরিয়ামের মাছের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবারের সবই ড্রাই ফুড বা শুকনো খাবার।
  • এই তালিকায় পড়ে বাজারে পাওয়া বিভিন্ন রকম প্যালেটস, ফ্লেকস, ট্যাবলেট, স্টিক ইত্যাদি।
  • ঘরের তৈরী মাছের খাবারও এই তালিকায় পড়ে।
  • এছাড়াও বিভিন্ন ন্যাচারাল ফুডের ফ্রোজেন ভার্সনও প্রক্রিয়াজাত করা খাবারের মাঝেই পড়বে।

চলুন এসব নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক-

প্যালেটস

  • প্যালেস মূলত গোলাকার দানাদার খাবার।
  • বাজারে পাওয়া বেশীরভাগ খাবারই দানাদার খাবার।
  • এই দানাগুলো খুব বেশী বড় হয়না।
  • প্যালেটস খাবারের মূল উপাদান হলো মাছ, স্কুইড, চিংড়ি, কেঁচো, স্পিরুলিনা, ভিটামিন, খনিজ, চর্বি, মাছের তেল এবং অন্যান্য তরল পুষ্টি সংমিশ্রণ।

আরোও পড়ুনঃ বিভিন্ন জাতের গাপ্পি মাছের দাম ও চেনার উপায়

ফ্লেক ফুড

  • ফ্লেক ফুড দেখতে অনেকটা ছেড়া কাগজের টুকরোর মতো।
  • ফ্লেকস ফুডের মূল উপাদান হলো মাছ, স্কুইড, চিংড়ি, কেঁচো, স্পিরুলিনা, ভিটামিন এবং খনিজ এর সংমিশ্রণ।

ফ্রোজেন ড্রাই ফুড

  • ফ্রোজেন ড্রাই ফুড মূলত বিভিন্ন লাইভ বা জীবন্ত খাবারের ফ্রোজেন ভার্সন।
  • বাজারে কিনতে পাবেন এসব খাবার কিংবা আপনি চাইলে বাড়িতেও বানাতে পারেন।
একুরিয়ামের মাছের খাবার
ছবিঃ একুরিয়ামের মাছের খাবার

বাসায় একুরিয়ামের মাছের খাবার বানানোর উপায়

আপনি চাইলে বাসায়ও খুব ভালো মানের ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একুরিয়ামের মাছের খাবার বানাতে পারবেন।তবে অনেকাংশে এটা ব্যায়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বলা যায়। চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে বাসায় একুরিয়ামের মাছের খাবার বানানো যায়

  • বাসায় খাবার বানানোর জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন- এক বা দুইটি পুঁইশাকের পাতা , মঁটর শুটির দানা ,আলু সিদ্ধ  , সিদ্ধ করা ডিমের কুসুম, এক বা দু’কোয়া রসুন, চিংড়ি, মাংসের টুকরো , মুরগির কলিজা, ব্রোকোলি, গাঁজর ও শশার ফালি, তরমুজের টুকরো প্রভৃতি । 
  • এইসব উপাদানগুলির মাঝে যে উপাদাগুলি আপনি নিবেন সেগুলি পরিমাণমতো নিয়ে হালকা করে সিদ্ধ করে নিতে হবে, আলাদা আলাদা করে নিলে ভালো।
  • তারপর উপদানগুলো নিয়ে তাতে মাল্টি ভিটামিন তরল ক্যাপসুল ( ফার্মেসিতে পাওয়া যায়) এর একটি বা দুইটির তরল অংশ একসাথে নিয়ে ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
  • এবার ব্লেন্ড করা খাবার থেকে পানি অপসারণের জন্য কোনো সুতি কাপড় বা শপিং ব্যাগের মাঝে নিয়ে চিপে চিপে সব পানি বের করুন।
  • তারপর পাওয়া অংশকে সংরক্ষণের জন্য শুকাতে হবে এজন্য আপনারা কোনো থালা বা বাটির উপর পাতলা করে লেপে দিয়ে রোদে বা চুলোয় শুকিয়ে নিন।
  • ব্যাস খাবার রেডি এখন বাতাস ঢুকতে পারবেনা এমন বয়েম বা প্যাকেটে রেখে মাছকে খাওয়ান।

আরোও পড়ুনঃ বাচ্চা গাপ্পি মাছের খাবার

একুরিয়ামের মাছের খাবার উপাদান নির্বাচন

একুরিয়ামের মাছের খাবার নির্বাচনে যে বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে তা হলো-

একুরিয়ামে কোন জাতের মাছ রেখেছেন

  • একুরিয়ামে যেসব জাতের মাছ রেখেছেন তাদের বয়স এবং সাইজের উপর ভিত্তি করে খাবারের সাইজ এবং খাবারে প্রোটিন সহ ভিটামিন ও খনিজের পরিমাণ কেমন হবে তা নির্ধারণ করা হয়।
  • যদি ফ্রাই হয় তাদের জন্য খাবার গুড়ো করে দেওয়া লাগবে।আর বড় হলে দানাদার খাদ্যই খেতে পারবে।
  • একুরিয়ামের মাছের খাবার নির্বাচনে প্রোটিন বা আমিষের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ কম হলে মাছের স্বাস্থ্য খারাপ হবে, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং মাছের শরীরের রঙ নষ্ট হয়ে যাবে। আবার খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বেশী হলেও একুরিয়ামের পানি ঘোলা হবে এবং পানি দ্রুত নোংরা হবে।
  • তাই আপনার একুরিয়ামের মাছের জন্য কি পরিমাণ আমিষ গ্রহণ করতে পারে তার উপর নির্ভর করে খাবার নির্ধারণ করবেন।

মাছগুলো কোন ধরণের খাবার বেশী পছন্দ করে

  • আপনার একুরিয়ামের মাছগুলো প্রক্রিয়াজাত ড্রাই ফুড বেশী পছন্দ করে নাকি লাইভ ফুড বেশী পছন্দ করে সেটা খেয়াল করতে হবে।
  • যদি ফ্রোজেন ড্রাই ফুড আগ্রহ সহকারে খায় তাহলে সে অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।

মাছগুলো পানির কোন স্তরের খাবার খায়

  • খাবার নির্বাচনের আগে দেখতে হবে মাছগুলো একুরিয়ামের পানির কোন স্তরের খাবার খায়।
  • যদি উপরের স্তরে এসে খাবার খেতে পছন্দ করে তবে ভাসমান বা আস্তে আস্তে ডুবে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে।যেমনঃ ফ্লেক ফুড।
  • যদি নিচের স্তরের খবার খায় তাহলে ডুবন্ত খাবার বা সিঙ্কিং ফুড নিলেই হবে।যেমনঃ প্যালেট ফুড।

আরোও পড়ুনঃ গাপ্পি মাছের বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা

একুরিয়ামের মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম

একুরিয়ামের মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম
ছবিঃ একুরিয়ামের মাছের খাবার দেওয়ার নিয়ম
  • একুরিয়ামের মাছের খাবার এমন হিসেবে দিবেন যাতে খাবারটুকু একুরিয়ামে থাকা মাছগুলো ২-৩ মিনিটের মাঝে খেয়ে শেষ করতে পারে।
  • কতটুকু খাবার মাছগুলো ২-৩ মিনিটে শেষ করতে পারে এটা বোঝার জন্য আপনি ইচ্ছেমতো খাবার দিন।৩ মিনিট পর্যন্ত মাছ যতোটা খাবার খেলো সেটার একটা আইডিয়া নিন তারপর বাকীটা একুরিয়ামের জাল দিয়ে সরিয়ে ফেলুন।
  • আপনার একুরিয়ামে যদি অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া ফিলট্রেশনের ব্যবস্থা ভালো থাকে তাহলে দিনে ২/৩ বেলা খাবার দিলেও সমস্যা হবেনা।কিন্তু ফিলট্রেশন ব্যবস্থা ভালো না হলে দিনে ১/২ বেলা খাবার দিবেন। কেননা খাবার মাছ খেয়ে শেষ না করতে পারলে একুরিয়ামের নিচে জমবে, পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বাড়বে, পানি দূষিত হয়ে মাছ মারা যাবে।

রেফারেন্স

ছবিঃ আনস্প্ল্যাশ

Summary
একুরিয়ামের মাছের খাবার এবং খাবার দেওয়ার নিয়ম
Article Name
একুরিয়ামের মাছের খাবার এবং খাবার দেওয়ার নিয়ম
Description
শখ করে একুরিয়াম কিনলেও একুরিয়ামের মাছের খাবার কি হবে এবং একুরিয়ামের মাছের খাবার নিয়ম না জানার ফলে নতুন অবস্থায়ই মাছ মরে। তাই জেনে নিন
Author
Publisher Name
Animalia BD
Publisher Logo

Leave a Comment

Fast & Free Delivery
Safe & Secure Payment
100% Money Back Guarantee
X