হাঁস পালন পদ্ধতি

  • হাঁস পালনের জন্য তাদের আবাসস্থল জলাশয়ের নিকটবর্তী হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  • পোলট্রির যে কোন শেড হাঁসদের আবাসস্থল হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
  • হাঁসের ঘর নীচু হলে কোনো সমস্যা নেই।
  • শেডের ছাদ যেমনই হোক না কেন—কিন্তু শেডের মেঝেটি পাকা হওয়া আবশ্যক।
  • হাঁস পালন এর জন্য তৈরী করা শেডে হাঁস ও মুরগী একসঙ্গে রাখা উচিত নয়।

হাঁস পালনের শেড বানানোর পদ্ধতি

হাঁস পালন এর শেড নির্মাণ করার জন্য যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখা আবশ্যক তা হলো- হাঁসের সংখ্যানুযায়ী শেডের আকার , শেডের ছাদ, শেডের ফ্লোর, শেডের দেওয়াল ও শেডের দরজা কেমন হবে।

শেডের আকার

  • ধরুন, আপনি ২৪টি হাঁস পালন করবেন আর এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৬ মিটার লম্বা, ২৩ মিটার চওড়া এবং ১৮ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট শেডের।

শেডের ফ্লোর ও দেওয়াল

  • গ্রামাঞ্চলে যারা হাঁস পালন করেন এবং যাদের বাড়ির চারপাশে পাকা দেওয়াল নেই—তাদের ক্ষেত্রে হাঁসের ঘরের দেওয়াল ও ছাদ মজবুত করা বাঞ্ছনীয় ।
  • টিন বা সিমেন্টের দেওয়াল বা ইট-সুরকির গাঁথনি ব্যবহার করলে শেডটি অধিক নিরাপদ হবে।
  • দেওয়াল মজবুত না হলে- শেয়াল, বনবেড়াল বা অন্যান্য বন্যজন্তুরা হাঁসদের আক্রমণ করতে পারে ৷ অতএব অনুরূপ ক্ষেত্রে হাঁসের ঘরটি মজবুত হওয়া আবশ্যক।
  • তারের বেড়া ব্যবহার করাও চলতে পারে।
  • মেঝেটি সিমেন্টের হ’লে পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে।

আরোও পড়ুন: মাছের পোনা পরিবহন পদ্ধতি

শেডের দরজা

  • হাঁসের ঘরের দরজাটি এমন চওড়া হবে যাতে হাঁসদের যাতায়াতের পক্ষে ঘুবিধা হয়।
  • কিছু অন্তর ঝাঁপের মতো দরজা থাকলে ঝাঁপি খুলে অনায়াসে ডিম সংগ্রহ করা যায় এবং ঘরটি মাঝে মাঝে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়।

শেড নির্মাণের লক্ষণীয় দিকসমূহ

  • ডিম পাড়ার সুবিধার জন্য মেঝেতে কিছু খড়-বিচালি পাতা সঙ্গত।
  • হাঁসের ঘরটি লম্বা ধরনের হলে ডিম সংগ্রহ করতে সুবিধা হবে।
  • হাঁস পালনের জন্য হাঁসের ঘরের সামনে বেশ কিছু জায়গা থাকা আবশ্যক—যাতে সকাল বেলা ঘর থেকে বের করার সময় তাদের একসঙ্গে খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
  • হাঁসের ঘরের সামনে ও অভ্যন্তরে জলের পাত্র থাকা দরকার। হাঁস সর্বদা পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করে, এমনকি রাত্রিবেলায়ও তারা প্রচুর পরিমাণে জল পান করে। অতএব হাঁসের ঘরের ভেতরে ও বাইরে লম্বা ধরনের জলপাত্র রাখা প্রয়োজন।
  • যেহেতু হাঁসের মলে প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ বিদ্যমান তাই হাঁসের ঘরের মেঝেটি রোদের তাপে শুকানো প্রয়োজন।
  • দিনের বেলা হাঁসদের বাইরে বের করে দেবার পর হাঁসের ঘরের দরজার পাল্লাগুলো খুলে রাখতে হবে যাতে রোদের তাপে ঘরের মেঝেটি বিশুষ্ক হয়।

পুরুষ হাঁস ও স্ত্রী হাঁস চেনার উপায়

পুরুষ হাঁস (Drake)স্ত্রী হাঁস (Duck)
১। পুরুষ হাঁসের গলার আওয়াজ জোর নয়, ফ্যাসফ্যাসে অস্পষ্ট শব্দের হয়। ৬-৭ সপ্তাহ বয়স হ’লেই আওয়াজ থেকে চেনা যায় ।১। স্ত্রী হাসেরা খুব জোরে প্যাক প্যাক করে ডাকে। এদের আওয়াজ সপ্তাহ বয়স হ’লেই আওয়াজ থেকে চেনা যায়।
২। রঙীন জাতের পুরুষ হাঁসের পালক বিশেষ উজ্জ্বল হয়।২। রঙীন জাতের স্ত্রী হাসের পালক অপেক্ষাকৃত কম উজ্জ্বল হয়।
৩। পুরুষ জাতীয় হাঁসের লেজের পালক কুঞ্চিত বা কোকড়ান পরিলক্ষিত হয়।৩। স্ত্রী জাতীয় হাঁসের পালক কুঞ্চিত হয় না।
৪। ১ দিন বা ২ দিন বয়সের পুং বা স্ত্রী জাতি নির্ণয় করতে হলে vent বা পাছার হাড়ের ব্যবধান লক্ষণীয় । পুরুষ হাঁসদের পাছার হাড় বিশেষ ব্যবধানযুক্ত নয় ।৪। স্ত্রী জাতীয় স্থাসদের পাছার হাড় বিশেষ ব্যবধানযুক্ত বা চওড়া হয়ে থাকে।

হাঁসের পরিচর্যা

  • হাঁসদের পালক গজাতে শুরু করলেই, তারা জলাশয়ে বিচরণের উপযুক্ত হয়ে ওঠে। তখন তারা খাল, বিল, নালা, ডোবা, পুকুর, দীঘি ইত্যাদির শামুক, জলজ ঘাস খাওয়ার উপযোগী হয় ।
  • কীটপতঙ্গাদি সংগ্রহ করে নিজেরাই নিজেদের উদরপূর্তি করতে হাঁসেরা খুব বেশী পরিমাণে আহার গ্রহণ করে।
  • ৪ কিলোগ্রাম পরিমাণ খাদ্যগ্রহণের পরে ১ কিলোগ্রাম ওজন বৃদ্ধি হয়।
  • ডিম-পাড়া হাঁস তথা বাড়ন্ত হাঁসদের যথোপযুক্ত পরিমাণে খাদ্য খাওয়ানো প্রয়োজন ।
  • হাঁসদের দেহে যাতে চর্বি না জমে সে-বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

হাঁসের খাদ্য উপাদান

  • হাঁসদের খাদ্যতালিকায় ৩৫ ভাগ ভূট্টাচূর্ণ, ২০ ভাগ গমের ভূষি বা চালের কুঁড়া, ৩০ ভাগ বাদামের খইল, ৫ ভাগ শুটকিমাছের গুঁড়ো, ৪ ভাগ চুনা পাথর বা ঝিনুকচূর্ণ, ৫ ভাগ শুষ্ক খাদ্য, ৫ ভাগ শুরু সবজিচূর্ণ, ৫ ভাগ লবণ এবং ৫ ভাগ লিভার-অয়েল থাকা আবশ্যক।
  • পানির সাথে মিশিয়ে হাঁসের খাবার খাওয়াতে হবে।
  • পরিষ্কার ও খাদ্যপোযোগী জল পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা প্রয়োজন ।

আরোও পড়ুন:

হাঁসের ডিম ও প্রজনন

  • প্রজননের জন্য ৫/৬টি স্ত্রী হাঁসের জন্য ১টি পুরুষ হাঁস প্রয়োজন।
  • হাঁসেরা সচরাচর রাত্রে এবং সকালে ডিম পাড়ে। অতএব সকাল ১০টার পরেই তাদের ঘর থেকে জলাশয়ে বিচরণের জন্য ছেড়ে দেওয়া ভালো।
  • নতুবা যেখানে সেখানে ডিম পাড়লে ডিম সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হতে পারে।
  • সাধারণ হাঁসের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করতে ২৮ দিন সময় লাগে, তবে বিদেশী মাসকোডী জাতের হাঁসের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করতে ৩৫ দিন সময় লাগে ।
  • মুরগীদের মতো ইনকিউবেটারের সাহায্যে হাঁসের ডিম ফোটানো সম্ভব।
  • হাঁসেরা শান্ত পরিবেশ পছন্দ করে তবে তাদের পরিচর্যাও শান্তভাবে রা আবশ্যক।

আরোও পড়ুন:

হাঁসোর বাচ্চার পরিচর্যা

  • ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়স না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চা হাঁসেরা জলাশয়ে বিচরণ করতে সমর্থ হয় না।
  • তবে ৫ সপ্তাহ বয়স হলেই তারা ডাঙায় বা ঘাসভর্তি মাঠে অনায়াসে বিচরণ করতে পারে ।
  • হাঁসদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৪০.৫° থেকে ৪২.৫° সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে (১০৬.৭ থেকে ১০৮.৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট ) ।
  • হাঁসদের তাপমাত্রার স্বাভাবিক গড় হচ্ছে ৪২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড (১০৭.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট ) ।

হাঁসের রোগ-ব্যাধি

  • পূর্ণবয়স্ক হাঁসেরা সচরাচর কোন রোগব্যাধির দ্বারা আক্রান্ত হয় না, তাই হাঁস পালন এর জন্য বিশেষ কোনো সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন হয়না।
  • রানীক্ষেত রোগের দ্বারা হাঁসেরা কদাচিৎ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
  • হাঁসেরা প্যারাসাইট জাতীয় কোন রোগের দ্বারাও আক্রান্ত হয় না।
  • তবে কলেরা, ভাইরাস হেপাটাইটিস্ (hepatitis), কীলরোগ (keel disease) এবং প্লেগ (fowl plague) রোগের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।

আরোও পড়ুন: হাঁসের রোগ-ব্যাধি ও চিকিৎসা

হাঁস পালনের আনুষঙ্গিক দিকসমূহ

  • হাঁস পালন এর জন্য ঘর নির্মাণের খরচও মুরগীর তুলনায় কম।
  • হাঁসেরা তাদের স্বাভাবিক খাদ্য নিকটবর্তী জলাশয় থেকে সংগ্রহ করে খেয়ে থাকে বলে খাদ্যজনিত ব্যয়ও অনেক কম হয়।
  • তবে নিকটে জলাশয় না থাকলে এবং হাঁসেরা যদি তাদের স্বাভাবিক খাদ্য নিজেরা সংগ্রহ করে খেতে না পারে তবে খাদ্যজনিত ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং হাঁস পুষে আর্থিক লাভ করা সম্ভব হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *