Skip to content

শীতে কবুতরের সুরক্ষায় আপনার করণীয়

শীতে কবুতরের সুরক্ষায় আপনার করণীয়

শীত সবার জন্যই অনেকটা কষ্টদায়ক।সেটা হোক মানুষ কিংবা প্রাণী। মানুষ উষ্ণ কাপড়ের দ্বারা শীত নিবারণ করতে পারলেও প্রাণীরা তা পারেনা আবার তাদের ভাষাও আমাদের বোধগম্য না হওয়ায় তা আমরা বুঝতেও পারিনা।তবে যেসব প্রাণীর বাণিজ্যিক উৎপাদন বা পালন করা হয় সেসব ক্ষেত্রে আমাদের আবার অনেকটা সচেতন হতে হয় কেননা এক্ষেত্রে সচেতন না হলে সকল প্রাণী মারাত্মক প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে পারে। যেমনঃ এই শৈত্য প্রবাহ ও কনকনে শীতের মাঝে অনেক কবুতর খামারীই তার কবুতরসমূহ নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন। কি করা যায় কিংবা কোন পদ্ধতিতে শীতে কবুতর এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় এবং সুস্থ রাখা যায় এসব ভাবনার অবসান ঘটানোর জন্যই লিখছি কীভাবে এই শৈত্য প্রবাহ ও কনকনে শীতে কবুতর এর সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন।

শীতে কবুতরের যত্ন

প্রথম কথা হলো শীতে কবুতর কিংবা পাখি নিয়ে ভয়ের কিছু নাই কেননা কবুতর এন্ডোথার্মিক (Endothermic) প্রাণী যার মানে হলো উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী।অর্থাৎ এসব প্রাণী তার শরীরের তাপমাত্রা অভ্যন্তরীণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এরা নিজেদের উষ্ণ রাখার জন্য তাদের শরীরের মাঝে নিজস্ব তাপ উৎপাদন করতে পারে, যার ফলে বাহ্যিক পরিবেশের তাপমাত্রার পরিবর্তন সত্ত্বেও শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে স্থির রাখতে সক্ষম।
আশা করি এবার খামারের কবুতর নিয়ে আপনাদের চিন্তা অনেকটা দূর হয়েছে কেননা এরা নিজেরাই যখন নিজেদের জন্য শীত মোকাবেলা করতে পারে। এরপরও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কবুতরকে শীত মোকাবেলায় বাহ্যিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় যা জানানোর জন্যই আজকের এই আয়োজন।

আরোও পড়ুনঃ কবুতর এর বিভিন্ন রোগ এবং এর প্রতিকার

শীতে কবুতরের তাপ সংরক্ষণ

চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক শীতে কবুতর কীভাবে নিজের শরীরে উৎপন্ন তাপ সংরক্ষণ করে শীত মোকাবেলা করে-

অন্যান্য পাখিদের মত কবুতরও নিজেদেরকে উষ্ণ রাখার জন্য বিভিন্নধরণের শারীরিক ও আচরণগত দিক দিয়ে অভিযোজিত হয় যা তাদেরকে শৈত্য প্রবাহ কিংবা কনকনে শীতের সময় শরীরের মাঝে তাপমাত্রা উৎপাদন করে বাহ্যিক পরিবেশের সাপেক্ষে তাদেরকে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করে।

শীতে কবুতর
ছবিঃ শীতে কবুতরের সুরক্ষা

শীত মোকাবেলায় কবুতরের শারীরিক অভিযোজন

শীত কবুতর এর সুরক্ষায় শারীরিক অভিযোজনের অঙ্গ প্রত্যঙ্গসমূহ হলো-

১.পালক

কবুতরের পালক বাহ্যিক পরিবেশের তীব্র শীতের প্রকোপ থেকে কবুতরের দেহকে সবচেয়ে বেশী সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও কবুতরের দেহে তাপের সাম্যতা ও তাপ সংরক্ষণে সহায়তা করে। উড়ার সময় কিংবা খাবার গ্রহণের সময় পালকে তৈলাক্ত পদার্থ লাগে যা পানি প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে এবং শীতে সুরক্ষা দেয়।

২. পা ও পায়ের পাতা

শীত মোকাবেলায় কবুতর বাহ্যিক পরিবেশের সাপেক্ষে নিজের শরীরে যে তাপ উৎপাদন করে তা যাতে শরীরের বাইরে অবমুক্ত না হয় সেজন্য কবুতরের পা ও পায়ের পাতা বিশেষভাবে অভিযোজিত হয় কেননা সেখানে লোম থাকেনা। পা ও পায়ের পাতার রক্তনালী সংকোচনের মাধ্যমে কবুতর পা এর তাপমাত্রা সংরক্ষণ করে যা তাকে বেশী তাপ সংরক্ষণে সহায়তা করে। এছাড়াও পা এবং পাতায় থাকে বিশেষ আঁইশ এটাও তাপ সংরক্ষণে অবদান রাখে।

৩. চর্বি সঞ্চয়

দেহে তাপ উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য চর্বির ভূমিকা অনেক।তাই কবুতর শীত সুরক্ষার জন্য দেহে চর্বি সঞ্চয় করে। এই চর্বি তার দেহে তাপ উৎপাদনের পাশাপাশি জ্যাকেটের ন্যায় শীত থেকে সুরক্ষা দেয়।

আরোও পড়ুনঃ কবুতরের রাণীক্ষেত রোগের কারণ ও চিকিৎসা

শীত মোকাবেলায় কবুতরের আচরণগত অভিযোজন

শীত মোকাবেলায় কবুতরের আচরণগত অভিযোজনসমূহ হলো-

শীতে কবুতর
ছবিঃ কবুতরের আচরণগত অভিযোজন


১.ঠোঁট ও পা গুঁজে দিয়ে বসা

অনেকসময় দেখা যায় কবুতর এক পা পালকের মাঝে ঢুকিয়ে অন্য এক পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে কিংবা দুই পা ই পালক দিয়ে পেঁচিয়ে গুঠিসুটি হয়ে বসে আছে।আবার অনেকসময় তো দুই পা এবং ঠোঁট ও পালকে গুঁজে জড়োসড়ো বসে থাকে।যার সবই মূলত শীত মোকাবেলায়।এমন দেখলে তখন কবুতরের জন্য বাহ্যিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

২.পালক ফোলানো

যখন শৈত্য প্রবাহ কিংবা অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভূত হয় তখন তা মোকাবেলায় কবুতর তার পালক দিয়ে বাতাসের থলি (Air Pockets) বানিয়ে ফেলে।আমরা জানি বায়ু তাপ অন্তরক তাই ঠান্ডা অনুভূত হতে দেয়না আবার শরীরের উৎপন্ন তাপও বাহিরে আসেনা।

৩. রোদ পোহানো

শীতের মাঝে সকাল বেলা সূর্য উঠলেই দেখা যায় কবুতরের ঝাঁক উড়ে এসে রোদযুক্ত ঘরের চালায় বসে। এরা তখন রোদ্রের দিকে পিঠ দিয়ে পাখনা ও লেজগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে পালক ও গায়ের চামড়ায় তাপ পায় এবং আরামদায়ক উষ্ণ হয়।

৪. কাঁপুনি

শীতের সময় কবুতরের দেহে বেশী পরিমাণে তাপ উৎপাদনের জন্য শরীরের বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করানোর জন্য শরীর ঝাঁকুনি দেয়। কবুতরের এই ঝাঁকুনি বা কাঁপুনি ব্যবস্থা খুবই কার্যকরী তবে সাময়িক সময়ের জন্য।

শীতে কবুতরের যত্নে খামারীর করণীয়সমূহ

এতক্ষণ যেসব সুরক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা হলো তা একান্তই শীতে কবুতর এর অভিযোজিত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একজন কবুতর খামারী হিসাবে আপনারও দায়িত্ব এই অবলা প্রাণীগুলার জন্য একটু আরামদায়ক জায়গা তৈরী করে দেওয়া।এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে আপনি কবুতরের মাঝে উঞ্চতা ছড়াবেন যা তাদের শীত মোকাবেলায় সহযোগী হবে-

  • প্রথমত আপনাকে কবুতরের ঘরের উষ্ণতা বৃদ্ধি ও  সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য অনেক খামারীই কবুতর ঘরে ইলেকট্রিক লাল বাতি দেন, যা কবুতরের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।কবুতর ঘরে লাইটের ক্ষতিকর দিকগুলো নিচের কলামে আলোচনা করা হয়েছে।
  • শীতে কবুতর ঘরের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ইলেকট্রিক হিটার ব্যবহার করতে পারেন।এছাড়াও বিদ্যুৎ খরচ কমাতে চাইলে কম খরচে কিছু ফেলনা জিনিস দিয়ে রুম হিটার বানানোর কৌশল আলোচনা করা হয়েছে।
  • কবুতরের শেড পুরোপুরি চট দিয়ে মুড়িয়ে দিলে ভালো হয় তবে খেয়াল রাখবেন যাতে শেডে অক্সিজেন,  কার্বন ডাই-অক্সাইড ও এমোনিয়া গ্যাস চলাচল করতে পারে।
  • অতিরিক্ত শীতের প্রকোপ হলে কবুতর ঠান্ডা পানি খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে যা পানিশূন্যতার কারণ হবে।তাই দিনে দুবেলা খাবার দেওয়ার সময় শেডে কুসুম গরম পানি দিবেন যা কবুতরের জন্য আরামদায়ক হবে।
  • শীতে কবুতরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে  এবং কবুতরের শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে ভিটামিন-সি, ভিটামিন AD3E এবং  E-Sel খাওয়াতে পারেন।

আরোও পড়ুনঃ কবুতরের বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা

শীতে কবুতরের ঘরে আলো দেওয়ার সুফল-কুফল

শীতে কবুতর এর সুরক্ষার জন্য কবুতরের ঘরে আলো দিতে পারে তবে আলো শুধু প্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরের ঘরেই দিতে পারবেন।কেননা অপ্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরের জন্য অধিক সময় আলো বিভিন্ন ক্ষতির কারণ হতে পারে। কবুতরের জন্য ১৫-১৬ ঘন্টার বেশী সময় আলো দেওয়া যাবেনা। এই সময়ের হিসাব করতে হবে দিনের আলো এবং প্রদত্ত কৃত্রিম আলোর সময় মিলিয়ে। তাই যদি হিসাব করে আলো চালু বা বন্ধ করতে পারেন তাহলে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতেই পারেন।

কবুতরের ঘরে বেশী সময় আলো দেওয়ার কুফলসমূহ

  • অপ্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরের যৌন পরিপক্বতা এনে দিবে যা মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
  • অতিরিক্ত সময় আলো কবুতরকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার সুযোগ করে দিবে যা ফলে কবুতর স্থূল স্বাস্থ্যের হবে এবং ডিম পাড়ায় সমস্যা সৃষ্টি হবে।
  • বিশ্রামের সময় কমে যাবে কেননা অন্ধকার না হলে বিশ্রাম নিতে চায়বেনা।
  • অতিরিক্ত সময় আলো বিভিন্ন বদঅভ্যেসের কারণ হবে যা পরবর্তীতে দূর করা কষ্টসাধ্য হবে।

শীতে কম খরচে রুম হিটার বানানোর কৌশল

রুম হিটার বানানোর জন্য প্রয়োজন হবে একটি মাঝারি আকারের টিনের জার বা  কৌটার,চিকন রড বা মোটা জিআই তার, কয়লা এবং পোড়ানোর জন্য কয়েক টুকরো কাঠ।
পদ্ধতি
প্রথমে জারটির নিচের দিক থেকে ৫-৬ ইঞ্চি উপরে চারপাশে আড়াআড়ি কয়েকটি ছোট ছোট ছিদ্র করে  মাপমতো রড টুকরো কিংবা জিআই তার ঢুকিয়ে দিন। যা দেখতে অনেকটা ছাঁকনির মত হবে। তারপর ছাকনির ১-২ ইঞ্চি নিতে লাকড়ি এবং কয়লা ঢোকানোর মত একটি গোল বা চারকোনা ছিদ্র করেন। এরের কাঠে আগুন ধরিয়ে দিন যাতে কয়লা সহ আগুন ধরে এবং তারপর কাঠ বের করে নিন। ধোঁয়া বের হওয়া শেষ হলে তা ঘরে ঢুকিয়ে দিন। জারের উপরের অংশে একটি লোহার নেট বসিয়ে দিন যাতে কবুতর ভেতরে না যায়।ব্যাস আর  কিছু করা লাগবেনা এবার ঘরের উষ্ণতা বাড়বে।

রেফারেন্স

শীতে কবুতরের যত্ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Home

Home

Home

Home

Home