Skip to content

একুরিয়ামের মাছের রোগ ও চিকিৎসা

  • by
একুরিয়ামের মাছের রোগ ও চিকিৎসা

আপনার শখের একুরিয়ামে রাখা সৌন্দর্যবর্ধক মাছগুলোর রঙ যদি নষ্ট হতে থাকে কিংবা আপনার কাছে মাছের অবস্থা অস্বাভাবিক লাগে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার শখের মাছটি রোগে আক্রান্ত। একুরিয়ামের মাছের রোগ, রোগের কারণ,লক্ষণ ও চিকিৎসা না জানলে একুরিয়ামের সব মাছ মারা পর্যন্ত যেতে পারে।

Table of Contents

একুরিয়ামের মাছের রোগ কেন হয়?

  • একুরিয়ামের মাছের রোগ হওয়ার জন্য প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী হলো বিভিন্ন পরজীবি। এরা মাছের শরীরের ভেতরে ও বাইরে বাসা বেধে মাছের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং মাছকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
  • পরজীবি ছাড়াও মাছের শরীরে রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং একুরিয়ামের নোংরা ও মানহীন পানি

একুরিয়ামের মাছের রোগ এবং বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

আজকে আমরা জানবো পরজীবি, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের সংক্রমণে একুরিয়ামের মাছের বিভিন্ন রোগ, রোগের কারণ, লক্ষণ এবং রোগাক্রান্ত মাছের চিকিৎসা সম্পর্কে।

একুরিয়ামের মাছের রোগ ও চিকিৎসা

মাছের ফিন রট বা পাখনা পঁচা রোগ

ফিন রট বা পাখনা পঁচা রোগের কারণ

  • একুরিয়ামের মাছের জন্য ফিনরট বা পাখনা পঁচা একটি ব্যাকটেরিয়াবাহিত ছোঁয়াচে রোগ।
  • ফিনরট রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া হলো Pseudomonas fluorescens. প্রায় সব মাছেই এই রোগ হয় তবে যেসব মাছের লেজ বড় ও সূক্ষ্ম ওইসব মাছ বেশী আক্রান্ত হয় যেমনঃ গাপ্পি, গোল্ডফিস, বেটা ফিশ, অ্যাঞ্জেলফিশ ইত্যাদি।
  • মাউথ ফাঙ্গাস রোগের নাম থেকেই বোঝা যায়, এই রোগ মাছের পাখনা এবং লেজে আক্রমণ করে, যার ফলে মাছের পাখনা ও লেজের রঙ পরিবর্তন হয়, পাখনা ও লেজের ক্ষতি হয় এবং পরিশেষে মাছের মৃত্যু হয়।

ফিনরট রোগের লক্ষণসমূহ

  • ফিনরট রোগ হলে মাছের পাখনার প্রান্তগুলো কালো/বাদামী রঙের হয়ে যায়।
  • পাখনা ঝগড়া হয়ে যায়।
  • পাখনার গোড়া মোটা ও লালচে রঙের হয়ে যায়।
  • আস্তে আস্তে পুরো পাখনা পঁচে যেতে পারে কিংবা পাখনার বড় একটি অংশ খসে পড়ে যেতে পারে।
  • আক্রান্ত মাছ নড়াচড়া কম করে,একজায়গায় স্থির হয়ে থাকে।
  • খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

ফিনরট রোগের চিকিৎসা

  • ফিনরট একটি ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় চিকিৎসা শুরু করার আগে আক্রান্ত মাছকে অন্যত্র রাখতে হবে এবং রোগের কারণগুলোকে চিন্হিত করতে হবে।
  • একুরিয়ামের পানির  তাপমাত্রা, পিএইচ, খরতা, ক্লোরিন, অ্যামেনিয়া ও নাইট্রেট এর মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
  • পানি পরিবর্তন করতে হবে এবং পানিতে একুরিয়াম সল্ট ব্যবহার করতে হবে।
  • পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা এবং ফিল্টার সচল কিনা পরীক্ষা করুন।
  • ফেনোক্সিইথানল, ম্যালাকাইট গ্রিন মিথিলিন ব্লু সমৃদ্ধ ঔষধ ব্যবহার করুন।
  • পাখনায় পচন ধরা স্পষ্ট হলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন।
  • পাখনায় ছিদ্র থাকলে এন্টিফাঙ্গাল জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করুন।

আরোও পড়ুনঃ বিভিন্ন জাতের গাপ্পি মাছের দাম ও চেনার উপায়

মাছের মাউথ ফাঙ্গাস বা কলামনারিস রোগ

মাছের মাউথ ফাঙ্গাস রোগের কারণ

  • Flavobacterium columnare নামক রড আকৃতির,গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার জন্য মাছের মাউথ ফাঙ্গাস রোগ হয়।এই ব্যাকটেরিয়ার নাম অনুসারে এই রোগকে কলামনারিস রোগ ও বলা হয়।
  • মাউথ ফাঙ্গাস রোগটি মুখের সাথে সম্পর্কযুক্ত হলে এই রোগের ফলে মাছের ফুলকা ও চোয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশাপাশি শরীর ও ত্বকে প্রভাব পড়ে।

মাউথ ফাঙ্গাস রোগের লক্ষণ

  • প্রথমে মাছের পাখনা পচন ধরে, ত্বকে ঘা দেখা দেয় যা মাছের ফুলকা পর্যন্ত বিস্তার করে এবং ফুলকায় ছোপ ছোপ দাগের সৃষ্টি করে।
  • ফুলকার রঙ পরিবর্তিত হয়ে হালকা বা গাঢ় বাদামী হয়ে যায়।
  • মাছ খুব দ্রুত শ্বাস নিবে দেখে মনে হবে হাঁপাচ্ছে। মাছ ঝিমোতে থাকবে এবং এক কোণায় স্থির থাকবে।
  • খাবার গ্রহণে কষ্ট হবে তাই খাবারে অনীহা আসবে।

মাউথ ফাঙ্গাস রোগের প্রতিকার

  • যেসব ঔষধ গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে ওইসব ঔষধ যেমনঃ কানামাইসিন (kanamycin)  ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • এন্টিব্যাকটেরিয়াল ঔষধ ফেনোক্সিইথানল (Phenoxyethanol) বা  নিফুরপিরিনল (nifurpirinol)  ব্যবহার করলেও হবে।
  • ফেনোক্সিইথানল প্রতি লিটার পানিতে ১০০ মিলিগ্রাম হিসেবে আপনার একুরিয়ামের পানি অনুযায়ী দিয়ে ৭ দিন ব্যবহার করতে হবে।
  • নিফুরপিরিনল (যা ফুরানেস বা নাইট্রোফুরাজোন নামেও পরিচিত) প্রতি লিটার পানিতে ০.২ মিলিগ্রাম হিসাবে একুরিয়ামের পানির পরিমাণ অনুযায়ী দিয়ে ৫ দিন ব্যবহার করতে হবে।
  • Melaleuca নামক চা গাছের তেল ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়।

আরোও পড়ুনঃ একুরিয়ামের মাছের যত্ন নেয়ার কয়েকটি ধাপ

সুইম ব্লাডার বা পটকা ফোলা রোগ

মাছের সুইম ব্লাডার বা পটকা ফোলা রোগের কারণ

  • মাছের সুইম ব্লাডার বা পটকা হলো একটি অভ্যন্তরীণ বাতাসে পরিপূর্ণ এক ধরনের বেলুন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা পানির অনেক গভীরেও মাছকে ভাসিয়ে রাখে এবং শ্বসনে ভূমিকা পালন করে। গোল্ডফিস, বেট্টাফিস সহ অনেক বনি একুরিয়াম ফিসেই এটা থাকে।
  • একুরিয়ামের মাছের সুইম ব্লাডার বা পটকা সমস্যা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের জন্য কিংবা মাছের দ্রুত ও বেশি পরিমাণ খাবার গ্রহণ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির জন্য হয়। 
  • পানির মান ( পিএইচ,খরতা) খারাপ হলেও সুইম ব্লাডার সমস্যা হতে পারে।
  • খাবারের মান বাজে ধরণের হলেও এসমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
  • হঠাৎ করে পানির তাপমাত্রা কমে গেলেও পটকা ফোলা সমস্যা হয় কেননা পানির তাপমাত্রা বাড়লে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে এবং মাছের হজমে সমস্যা হয় ফলে পটকা স্থানচ্যুত হয়।
  • অনেকসময় আবার জন্মগত ত্রুটির জন্য একুরিয়ামের মাছের সুইম ব্লাডার বা পটকা ফোলা সমস্যা হয় যদিও তা খুব সামান্য।

সুইম ব্লাডার ডিসঅর্ডারের লক্ষণসমূহ

  • সুইম ব্লাডার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত মাছ একুরিয়ামের নিচ দিকে ডুবে যায়।
  • সোজা থাকার চেষ্টা করলেও সোজা থাকতে পারে না,উল্টো হয়ে যায়।
  • পেট ফুলে যায় এবং পিঠ বেঁকে যায়।
  • ক্ষুধা কমে যায়।ফেন্সি গোল্ডফিস গুলো এই রোগের শিকার হয় ।

সুইম ব্লাডার ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা

  • যদি হজম সমস্যার জন্য মাছের পটকা ফুলে যায় তবে একুরিয়ামের মাছকে দু-তিনদিন না খাইয়ে রাখলেই ঠিক হয়ে যাবে।
  • পাশাপাশি পানির তাপমাত্রা ও পিএইচ স্ট্যাবল রাখতে হবে।
  • ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে পটকা ফোলা রোগ হলে এন্টিবায়োটিক মেডিসিন ব্যবহার করলেই হবে।এক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ভালো কোম্পানির ঔষধ নিতে হবে।
  • একুরিয়ামের পানির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে, মাছের উচ্চতার চেয়ে এক-দু ইঞ্চি বেশী উচ্চতায় পানি রাখলেই হবে, পানিতে অল্প পরিমাণে একুরিয়াম সল্ট দিতে হবে।

আরোও পড়ুনঃ গাপ্পি মাছের রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

মাছের টিউবারকুলোসিস রোগ

ফিস টিউবারকুলোসিস রোগের কারণ

  • ফিস টিউবারকুলোসিস বা মাছের যক্ষা রোগের কারণ হলো Mycobacterium গণেরব্যাকটেরিয়া যেমন Mycobacterium marinum.  Mycobacterium এই গণের অন্য একটি প্রজাতি Mycobacterium tuberculosis  মানুষের যক্ষা রোগের কারণ হওয়ায় মাছের এই রোগকেও ‘মাছের যক্ষা’ নামে অভিহিত করা হয়।
  • সাধারণত রোগাক্রান্ত মাছ বা প্লান্ট কোনো প্রকার পরিশোধন ছাড়াই এনে একুরিয়ামে ছাড়লে মাছের মাঝে এই রোগ বংশবৃদ্ধি করে।
  • টিউবারকুলোসিস রোগে আক্রান্ত হলে মাছের শরীরে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পেতেও পারে আবার নাও পেতে পারে।

মাছের টিউবারকুলোসিস রোগের লক্ষণ

  • মাছের টিউবারকুলোসিস রোগ হলে স্পষ্ট কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয়না।
  • কম তবে অনির্দিষ্ট হারে মাছ মারা যেতে থাকে।
  • মাছের শরীরে গৌণ সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়।
  • নেক্রোপসির ( মৃত্যুর পর শরীররে পরীক্ষা)  সময় মাছের শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোতে গ্র্যানুলোমাস এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

টিউবারকুলোসিস রোগের প্রতিকার

  • একুরিয়ামের মাছের টিউবারকুলোসিস রোগে আক্রান্ত হলে কোনো স্পষ্ট লক্ষণও বোঝা যায়না তাই চিকিৎসা করারও ব্যবস্থা করা যায়না।
  • এই রোগ প্রতিকার করার চেয়ে  প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা নেয়া উত্তম।
  • তবে যদি মাছ মাঝে মধ্যেই কম বেশী পরিমাণে মারা যেতে থাকে তবে ধরতে হবে এটা টিউবারকুলোসিসের লক্ষণ তখন একুরিয়ামের লকডাউন করতে হবে মানে কোনো নতুন মাছ একুরিয়ামে দিবেননা কিংবা একুরিয়ামের মাছ বাইরে নিবেননা,একুরিয়াম সল্ট ব্যবহার করবেন।

আরোও পড়ুনঃ গোল্ডফিশ পালনের নিয়ম

মাছের ভিব্রিওসিস রোগ

মাছের ভিব্রিওসিস রোগের কারণ

  • ভিব্রিওসিস হলো vibrio গণের, গ্রাম নেগেটিভ, রড শেপড, অ্যানএরোবিক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হওয়া মাছের ছোঁয়াচে রোগ।
  • এটি একুরিয়ামের মাছ এবং খাবার মাছেরও হয়।
  • একুরিয়ামের পানির মান খারাপ হলে এবং অতিরিক্ত ও মানহীন খাবার দিলে মাছ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

মাছের ভিব্রিওসিস রোগের লক্ষণ

  • একুরিয়ামের মাছের ভিব্রিওসিস রোগ হলে মাছের ত্বকে ঘা হয় এবং অনেকসময় রক্তক্ষরণ হয় যার ফলে আক্রান্ত মাছের চোখ, মুখ, শরীর, পাখনা, লেজে লালভাব বা রক্তবর্ণ দেখা যায়।
  • মাছের সুন্দর রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়, পরিশেষে শরীরের মিউকাস নষ্ট হয়ে যায় এবং মাছের মাংসল অংশ খসে খসে পড়ে যায় ।
  • কিছু ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে মাছের চোখের বল প্রসারিত হয় ও কর্ণিয়ায় ক্ষত তৈরী হয় যার ফলে মাছ চোখে ঝাপসা ও অসচ্ছ দেখে।
  • প্রাথমিকভাবে অসচ্ছতা হলেও পরে চোখে ঘা হয় এবং চোখের কিছু অংশ গলে যায়।
  • মাছের খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়।

মাছের ভিব্রিওসিস রোগের চিকিৎসা

  • যেসব এন্টিবায়োটিক Vibirio ব্যাকটেরিয়ার কার্যকরিতা নষ্ট করে দিতে পারে ওইসব মেডিসিন ইউজ করলে কাজ হবে। এসব এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনের দ্বারা, গুড়ো করে খাবারের সাথে কিংবা একুরিয়ামের পানিতে দিয়ে ব্যবহার করা লাগতে পারে তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
  • বিজ্ঞানীরা খাবার মাছের ভিব্রিওসিসের কার্যকরী ঔষধ আবিস্কার করলেও একুরিয়ামের মাছের কার্যকরী ঔষধ তেমন আবিষ্কৃত হয়নি
  • একুরিয়ামের পানির তাপমাত্রা, পিএইচ ঠিকঠাক রাখতে হবে।মাছের খাবার মান ঠিক রাখতে হবে, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ভালো মানের খাবার খাওয়াতে হবে।

আরোও পড়ুনঃ গাপ্পি মাছের জন্য একুরিয়াম সাজানোর কৌশল

মাছের স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগ

মাছের স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগের কারণ

  • স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস( saprolegniasis) যা শীতকালীন ছত্রাক নামেও পরিচিত।
  • Saprolegnia sp. ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।
  • একুরিয়ামের মাছের শরীর ও ডিমে এই ছত্রাক আক্রমণ করে।
  • স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস মূলত একটি গৌণ সংক্রমণ যা বসন্তের শুরুতে দেখা যায়।
  • পানির তাপমাত্রা অনেক কম হয়ে গেলেও ( যেমনঃ ২০° এর নিচে) মাছ এই রোগে আক্রান্ত হয়।
  • এটি কোনো সংক্রামক রোগ না হওয়ায় আক্রান্ত মাছ ব্যাতীত অন্য মাছের সমস্যা হয়না।

মাছের স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগের লক্ষণসমূহ

  • স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগে আক্রান্ত মাছের ত্বকে তুলার মতো পদার্থ দেখতে পাওয়া যাবে যা আাস্তে আস্তে পেশী টিস্যু পর্যন্ত যেতে থাকবে।
  • ত্বক, পাখনা, পেশী ও ফুলকা  ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এবং চোখ ডুবে থাকে।
  • শরীরের অভন্তরে হেমোরেজিক আলসারেশন; লিভার, প্লীহা, চোখ এবং কিডনির সিস্টেমিক মাইকোসিস ঘটবে।
  • অবশেষে সংক্রমিত মাছ আাস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে দাবিত হবে।

মাছের স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগের চিকিৎসা

  • প্রথমেই একুরিয়ামের পানির তাপমাত্রা বৃষ্টি করতে হবে এজন তাপ বৃদ্ধিকারক হিটার ও তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মোমিটার ব্যবহার করতে হবে।
  • সংক্রমিত মাছকে প্রতিদিন এক লিটার পানিতে ১০-২৫ গ্রাম একুরিয়াম সল্ট মিশিয়ে ৫-৩০ মিনিট রাখতে হবে।
  • benzalkonium chloride লবণ ১ লিটার পানিতে ২ মিলিগ্রাম মিশিয়ে ১ ঘন্টা পর্যন্ত রাখলেও মাছ সুস্থ হবে।
  • এই সব লবণ ছাড়াও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, কোর সালফেট, ম্যালাকাইট গ্রীন ও মিথাইল ব্লু ব্যবহার করলেও স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস প্রশমিত হবে। 

আরোও পড়ুনঃ গাপ্পি ও বাচ্চা গাপ্পি মাছের খাবার

মাছের ইচ রোগ

মাছের ইচ রোগের কারণ

  • একুরিয়ামের মাছের রোগের জন্য দায়ী হলো Ichthyophthirius multifiliis নামক পরজীবি।
  • মাছের ইচ রোগ “হোয়াইট স্পট রোগ” নামেও পরিচিত।
  • একুরিয়ামে অনেক মাছ একসাথে রাখলে পানির মান যদি খারাপ হয়, তখন বিভিন্ন পরজীবিরা মাছের শরীরে জায়গা দখল করে এবং রোগের সংক্রমণ করে।
  • মাছকে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হলে কিংবা বেশীমাত্রায় খাবার দেয়া হলে মাছ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয় ফলে মাছের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যা মাছের শরীরে বিভিন্ন পরজীবিদের বংশবিস্তারে সহায়তা করে।

মাছের ইচ রোগের লক্ষণ

  • ইচ রোগে প্যারাসাইট মূলত একুরিয়ামের মাছের ফুলকা এবং ত্বকে আক্রমণ করে যার ফলে  মাছের ত্বক ও লেজের রঙ ধূসর হয়ে যাবে।
  • মাছের খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যানে ফলে মাছ দুর্বল হয়ে যাবে।
  • মাছের নড়াচড়া কমে যাবে এবং অলসভাবে এক জায়গায় ঝিমাবে।
  • বেশীরভাগ সময় একুরিয়ামের উপর দিকে অবস্থান করে এবং কোনো কিছুর সাথে তাদের শরীর ঘষে।

মাছের ইচ রোগের চিকিৎসা

  • অ্যাকোয়ারিয়াম সল্ট, পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা কপার সালফেট সমৃদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করলে ইচ রোগ প্রশমিত হয়।
  • বাজারে পাওয়া ইচ-এক্স ঔষধ ব্যবহার করলেও ফল পাওয়া যাবে।
  • প্রতি ১৫ লিটার পানির জন্য এক চাম চামচ কপার সমৃদ্ধ ঔষধ একুরিয়ামের পানিতে দিলে যা প্রায় একমাসের মত কার্যকর থাকবে এবং ইচ রোগে আক্রান্ত মাছকে সুস্থ করবে।

আরোও পড়ুনঃ টাইগার বার্ব মাছের পরিচর্যা

মাছের ভেলভেট রোগ

  • মাছের ভেলভেট মূলত পরজীবির সংক্রমণে হয়।এটি একটি খুবই সংক্রামক রোগ যা একসাথে পুরো একুরিয়ামের মাছকে আক্রমণ করে সব মাছ মেরে ফেলতে পারে।

মাছের ভেলভেট রোগের কারণ

  • একুরিয়ামের মাছের ভেলভেট রোগটি Oodinium pillularis বা Oodinium limneticum নামক পরজীবির সংক্রমণে হয়।
  • একুরিয়ামের পানির মান খারাপ হলে, হঠাৎ করে তাপমাত্রা পরিবর্তিত হলে কিংবা মাছকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নেয়া হলে এই পরজীবি মাছের শরীরে বাসা বাঁধে এবং মাছকে আক্রান্ত করে।

মাছের ভেলভেট রোগের লক্ষণ

  • ভেলভেট রোগে আক্রান্ত মাছ সবসময় কোনোকিছুর সাথে নিজের শরীরকে ঘষতে থাকবে।এটি করার দ্বারা তারা তাদের ত্বক থেকে পরজীবিদের সরাতে চায়।
  • মাছের গায়ে হলুদ বা মরিচা রঙের ময়লা জমে।
  • শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়।
  • খাবার চাহিদা কমে যায় ফলে ওজন হৃাস পায়।

মাছের ভেলভেট রোগের চিকিৎসা

  • ভেলভেট রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো একুরিয়ামের পানির তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বাড়াতে হবে এজন হিটার বা একুরিয়ামের পানির উপর লাইট লাগিয়ে দিতে হবে।
  • আক্রান্ত মাছকে একুরিয়াম থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত মাছকে টানা ১০ দিন কপার সালফেট পাউডার বা সি-ক্যাম কিউপ্রামিন দ্রবণে ২০-৩০ মিনিটের জন্য রাখতে হবে।
  • কপার সালফেট দ্রবণ সরাসরি একুরিয়ামে দেওয়া যাবেনা।

আরোও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০ টি পোষাপ্রাণীর তালিকা

মাছের কানকো পঁচা রোগ

  • মাছের কানকো পঁচা রোগই একুরিয়ামের মাছে সচরাচরই দেখা যায়।কানকো পঁচা রোগের জন্য  দায়ী পরজীবিগুলো মাছের ত্বকে বাসা বাধে এবং শরীর থেকে রক্ত চুষে।

মাছের কানকো পঁচা রোগের কারণ

  • মাছের কানকো পঁচা রোগের জন্য দায়ী পরজীবিগুলো প্রধানত আসে নতুন মাছ কেনার মাধ্যমে অন্য একুরিয়াম থেকে,তাই একুরিয়ামে নতুন মাছ দেয়ার সময় তা কয়েকদিন অন্য পাত্রে রেখে সুস্থ আছে কিনা সেটা দেখে অন্য মাছে সাথে একুরিয়ামে রাখবেন।

মাছের কানকো পঁচা রোগের লক্ষণ

  • শ্বাস প্রশ্বাসের সময় ফুলকা পুরোপুরি বন্ধ হবেনা কেননা পরজীবিগুলো ফুলকার স্বাভাবিক কার্যপ্রণালীকে বাধাগ্রস্ত করে।
  • একুরিয়ামের পানির উপর দিকে এসে আক্রান্ত মাছগুলো হাফাতে হাফাতে নিশ্বাস গ্রহণ করবে।

মাছের কানকো পঁচা রোগের চিকিৎসা

  • কানকো পঁচা রোগে আক্রান্ত মাছের জন্য একুরিয়ামের পানিতে স্টেরাজিন ও অক্টোজিন ব্যবহার করতে হবে।এর দ্বারা পরজীবিগুলো মারা যাবে।
  • পরজীবিগুলোর পাড়া ডিম ফুটে পরবর্তীতে নতুন পরজীবি যাতে না হয় এজন্য টানা ৫-৭ দিন এগুলো ব্যবহার করতে হবে।

আরোও পড়ুনঃ বিভিন্ন জাতের গোল্ডফিসের দাম ও চেনার উপায়

মাছের মাথায় ছিদ্র রোগ( Hole in the Head Disease)

  • একুরিয়ামের মাছের এই রোগ টি HLLE (Head and lateral line erosion বা HITH (Hole in the Head ) নামেও পরিচিত।মাছের মাথায় পার্শ্বীয় রেখা বরাবর ছোট ছোট খাঁজ খাঁজ থাকলে মাথার ছিদ্র রোগটি দেখা যায়।

মাথায় ছিদ্র রোগের কারণ

  • হেক্সামিটা(Hexamita) নামক প্রোটোজোয়ার কারণে মাছের মাথায় ছিদ্র রোগটি হয়।
  • একুরিয়ামের ডিসকাস মাছগুলো এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
  • অত্যধিক খর পানি ব্যবহার করলে কিংবা পানিতে দ্রবীভূত খনিজ পদার্থের ঘাটতি থাকলে মাছ হেড ইন হোল ডিজিস এ আক্রান্ত হয়।
  • পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকলে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ বেশী থাকলে মাছের মাথায় এই রোগটি হয়।

মাথায় ছিদ্র রোগের লক্ষণ

  • একুরিয়ামের মাছের হেড ইন হোল ডিজেস বা মাথায় ছিদ্র রোগ হলে তাদের শরীরে ও পাখনায় ছোট ছোট গর্ত দেখা যাবে।
  • সময়ের সাথে সাথে ছোট ছিদ্রগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকবে।
  • আক্রান্ত মাছের খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যাবে অনেকক্ষেত্রে খাবার গ্রহণ একদম বন্ধ করে দিবেহ, ঝিমোতে থাকবে।

মাথায় ছিদ্র রোগের চিকিৎসা

  • আক্রান্ত মাছকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে। আক্রান্ত মাছে মেট্রোনিডাজল ব্যবহার করতে হবে।
  • মাছের খাবার মান ভালো করতে হবে।
  • একুরিয়ামে ভালো মানের পানি ব্যবহার করতে হবে এবং জমে থাকা খাবার বা ময়লা সরিয়ে ফেলতে হবে।

আরোও পড়ুনঃ বাংলাদেশের পাওয়া বিভিন্ন জাতের পোষা বিড়ালের জাত

মাছের ড্রপসি রোগ

  • ড্রপসি রোগে একুরিয়ামের মাছ মূলত কিডনি সমস্যার কারণে ফুলে যায়।

মাছের ড্রপসি রোগের কারণ

  • ড্রপসি রোগ মূলত কিডনির সমস্যা তাই বিভিন্ন কারণে কিডনির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।যেমনঃ মাছের শারীরিক সমস্যা,একুরিয়ামের পানির সমস্যা, পরজীবি, অনেক মাছ একসাথে কিংবা মাছের পলিসিস্টিক কিডনি রোগ।

মাছের ড্রপসি রোগের লক্ষণ

  • ড্রপসি রোগে আক্রান্ত মাছের পেট আস্তে আস্তে ফুলতে থাকবে।
  • পেট এত পরিমাণ ফুলবে যে মাছের আঁইশগুলো দাড়িয়ে যাবে।

মাছের ড্রপসি রোগের চিকিৎসা

  • আক্রান্ত মাছকে অন্য জায়গায় রেখে দিন।
  • যদি লক্ষ করেন মাছ অন্য পাত্রে রাখার পর সুস্থ হচ্ছে তবে একুরিয়ামের পানি পরিবর্তন করে সব ম্যাটেরিয়ালস ক্লিন করে আবার মাছ রাখতে হবে।
  • সুস্থের কোনো লক্ষণ না দেখা গেলে বাজারে পাওয়া এমন ঔষধ যেমন কানাপ্লেক্স, মেট্রোপ্লেক্স বা ইপসম লবণ ব্যবহার করলেও মাছের ড্রপসি রোগ নিরাময় হয়।
  • পাশাপাশি এমন কোনো পশু ডাক্তার যদিনি মাছেরও চিকিৎসা করেন তার কিংবা কোনো একুরিয়াম দোকানের লোকেদের পরামর্শ নিলে ভালো হয়।

রেফারেন্স

ছবিঃ উইকিপিডিয়া

Summary
একুরিয়ামের মাছের রোগ ও চিকিৎসা
Article Name
একুরিয়ামের মাছের রোগ ও চিকিৎসা
Description
একুরিয়ামের মাছের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী হলো পরজীবি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক। চলুন জেনে রাখি এসব দ্বারা সৃষ্ট রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা -
Author
Publisher Name
Animalia BD
Publisher Logo

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *