গাপ্পি মাছের রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি
প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ হাজার গুণে উত্তম।বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গাপ্পি মাছের রোগ হলে আক্রান্ত মাছকে বাঁচানো কষ্ট সাধ্য এমনকি অনেকসময় অসম্ভবও বটে।তাই গাপ্পি মাছ এর রোগ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখাটাই সেটাই উত্তম।গাপ্পি মাছ অনেক শক্ত ধরণের মাছ হওয়ায় বিশেষ কোন রোগ ব্যাধি তেমন হয় না তবে এজন্য অবশ্যই অ্যাকুরিয়ামের পরিবেশ গাপ্পি মাছের অনূকূলে থাকতে হবে।কেননা অ্যাকুরিয়ামের পরিবেশ যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ভালো মানের হয় তবে গাপ্পি বলতে গেলে তার জীবনকালের ৯০ ভাগ সময়ই সুস্থ সবল ও সুন্দর চেহারার থাকবে।
গাপ্পি মাছের রোগ প্রতিরোধে করণীয়সমূহ
- যথাযথ স্থানে একুরিয়াম সেট আপ করতে হবে যেন সূর্যের আলো পায়।
- গাপ্পি মাছের জন্য কোনো বিশেষ যত্ন না করলেও চলে তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও যত্ন একুরিয়ামের অনেক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, পরজীবি দূর করে মাছকে রোগমুক্ত রাখতে সক্ষম করে তুলবে।
- গাপ্পি মাছ সাধারণত খর পানিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।তাই গাপ্পি মাছ রাখার জন্য পানির তাপমাত্রা ২৫.৫° সেলসিয়াস হতে ২৭.৮° সেলসিয়াস এর মাঝে রাখতে হবে,পানির পিএইচ (৭.০-৭.৩) এর মাঝে রাখতে হবে যদিও গাপ্পি ৫.৫ – ৮.৫ পর্যন্ত সহ্য করতে পারে পাশাপাশি পানির লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- একুরিয়ামের মাছকে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া যাবেনা।মোট মাছের ওজনের ৫ ভাগ ওজনের খাবার দিবেন যা তারা ২-৩ মিনিটের মাঝেই খেয়ে শেষ দিতে পারবে।
- প্রতি ১০/১২ দিন পরপর একুরিয়ামের মোট পানির ৩০/৪০ ভাগ পরিবর্তন করুন।এক্ষেত্রে একুরিয়ামের নিচের দিকে ময়লা ও বর্জ্যসহ পানি পরিবর্তন করতে হবে।
- একুরিয়ামের পানিতে যাতে ফিলট্রেশন ও অক্সিডেশন ভালোভাবে হয় এজন্য অবশ্যই বায়ো স্পন্জ ফিল্টার, আন্ডার গ্রাভেল ফিল্টার, কর্ণার ফিল্টার, পাওয়ার ফিল্টার বা এয়ার পাম্প ব্যাবহার করতে পারেন তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই এয়ার স্টোন ব্যবহার করতে হবে নাহলে প্রবল ঢেউ এর সৃষ্টি করবে যা সাতারু গাপ্পির জন্য বাঁধার সৃষ্টি করবে এবং নরম লেজ ক্ষতিগ্রস্ত করবে যা মাছকে অসুস্থ করে ফেলবে।
- একুরিয়ামে পর্যাপ্ত জীবন্ত উদ্ভিদ লাগাতে হবে, প্লাস্টিক ও ক্যামিকেল ম্যাটেরিয়ালস(রঙিন বালি,পাথর বা প্লাস্টিক গাছ) কমাতে হবে।
- নতুন মাছ ও প্লান্ট একুরিয়ামে যোগ করার আগে সেগুলোকে অন্য ট্যাঙ্কে কয়েকদিন রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন তারপর মূল একুরিয়ামে রাখুন।
- কোনো মাছের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করলে সেই মাছকে অন্য পাত্রে রেখে গতিবিধি খেয়াল করুন।
বিভিন্ন জাতের গাপ্পি মাছের দাম ও চেনার উপায় জানার জন্য পড়ুন..
কীভাবে বুঝবেন গাপ্পি মাছের রোগ হয়েছে?
গাপ্পির লেজ তাদের শরীরের তুলনায় বড়, ছড়ানো, হালকা ও নরম হওয়ায় ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় প্রায়শই।
- কোনো মাছ যদি একুরিয়ামের প্লান্টের আড়ালে লুকিয়ে থাকে কিংবা কোথাও স্থির হয়ে থাকে দিনের বেশীরভাগ সময় তবে বুঝতে হবে মাছটি রোগাক্রান্ত।
- তখন ওই গাপ্পি মাছটিকে আলাদা করে গাপ্পি মাছ এর রোগ টি লক্ষণের সাথে মিলিয়ে নিরূপণ করতে হবে এবং চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
গাপ্পির রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
গাপ্পি মাছ যেসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয় তা হলো ইচ, ভেলভেট, ফিনরোট বা পাখনা পচা রোগ, ফাঙ্গাস, মাউথ ফাঙ্গাস, ড্রপসি প্রোটোজোয়ান, টিউবারকুলোসিস, পপ’ড আই, ফুলকা ফোলা, ফুলকা পঁচা, রেড ব্লাড স্পট, সুইম ব্লাডার বা পটকা ফোলা রোগ, VHC এবং স্কোলিওসিস বা মেরুদন্ড বাঁকা রোগ প্রভৃতি।
আজ আমরা এসব রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো-
ইচ রোগ

লক্ষণ
- এই রোগে মাছের সারা শরীরে সাদা সাদা ছোপ ছোপ দাগ পড়ে।
- মাছের শরীরে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হয় যার দরুণ পাথর বা প্লান্টের সুঁচালো জাগয়ায় গা ঘষতে থাকে।
- তাদের অস্বস্তিকর দেখাবে এবং খাবারের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
চিকিৎসা
- এজন্য পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। পানির তাপমাত্রা ৩০° সেলসিয়াস এর বেশী রাখতে হবে এবং থার্মোমিটার লাগিয়ে তা পর্যবেক্ষণে রাখা লাগবে।
- প্রতি ০৫ লিটার পানিতে ১ চা চামচ অ্যাকুরিয়াম সল্ট হিসাবে পানির পরিমাণে ৪-৭ দিন ব্যবহার করুন।
- বাজারের পাওয়া মেডিসিন সীক্যাম প্যারাগার্ড এর সাহায্য নিতে পারেন ডাক্তারের পরামর্শে।
- তারপর আস্তে আস্তে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকে আনুন।
গাপ্পি মাছ এর খাবার, প্রজনন ও অ্যাকুরিয়াম কিভাবে সাজাবেন তার বিস্তারিত জানতে পড়ুন…
ভেলভেট
লক্ষণ
- গাপ্পি মাছের ভেলভেট রোগটি খুবই সংক্রামক যা খুবই দ্রুত ছড়িয়ে ট্যাংকের সমস্ত মাছ মেরে ফেলতে পারে।
- এ রোগে আক্রান্ত মাছের শরীরে সোনালী ছোপ ছোপ দাগ হয়।
- প্রাথমিক অবস্থায় এটি চিহ্নিত করা অনেক কষ্টদায়ক কেননা দাগগুলো খুবই ক্ষুদ্র থাকে।কিন্তু বড় হওয়ার পরই মাছের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।
চিকিৎসা
- যদি দ্রুত আবিষ্কার করা যায় তবে একুরিয়ামের পানি ৭০-৯০ ভাগ বদলাতে হবে।
- কপার ট্রিটমেন্ট করতে হবে ৩ থেকে ৪ দিন।
- একুরিয়ামের আলো বন্ধ রাখতে হবে রোগমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত।
- পাশাপাশি সীক্যাম কিউপ্রামিন ব্যবহার করতে পারেন।
ফিনরোট

লক্ষণ
- ফিনরোট একটি ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ যা খুব দ্রুত ছড়ায় এবং মাছকে দ্রুত নিস্তেজ করে ১/২ দিনের মাঝে পুরো অ্যাকুরিয়ামের মাছ মেরে ফেলে।
- গাপ্পি মাছের ফিনরোট রোগ হলে মাছের ফিন বা পাখনা এবং লেজ এ পচন ধরে,মাছের শরীর শক্তিহীন হয়ে পড়ে,মাছ ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারেনা বলতে গেলে মাছ অনেকটা প্যারালাইজড হয়ে যায়।
- ফিনরোট রোগের লক্ষণ নজরে আসা মাত্র চিকিৎসাপদ্ধতি শুরু করে দেয়া আবশ্যক।
চিকিৎসা
- লক্ষণ দেখা মাত্রই মাছগুলোকে আলাদা করে ফেলবেন অর্থাৎ ভিন্ন পাত্রে বা অ্যাকুরিয়ামে ট্রান্সফার করবেন।আগের একুরিয়ামের ৫০ থেকে ৬০ ভাগ পানি পরিবর্তন করবেন।
- সাথে সাথে অ্যাকুরিয়ামের অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালস ( ফিল্টার,পাম্প,এয়ার স্টোন,প্লান্ট,পাথর) পরিষ্কার করে দিন।
- ম্যালাকাইট গ্রীন নামক লিকুইড মেডিসিন ১০ লিটার পানির জন্য ২/৩ ফোঁরা হিসেবে আপনার অ্যাকুরিয়ামের পানির পরিমাপে ৩/৪ দিন ব্যাবহার করবেন।
- এছাড়াও ম্যারাসিন,ম্যারাসিন ২, টেট্রাসাইক্লিন ব্যবহার করতে পারেন।
ফাঙ্গাস
লক্ষণ
- গাপ্পি মাছ ফাঙ্গাস রোগে আক্রান্ত হলে সারা শরীরে সাদা পাতলা পর্দার ন্যায় আস্তরণ দেখা যায়।
- অনেকসময় আক্রান্ত মাছের শরীরে সাদা ছোপ ছোপ লক্ষ করা যায়।
- ফাঙ্গাস রোগে আক্রান্ত গাপ্পি মাছ একুরিয়ামের প্লান্ট বা পাথরের সাথে গা ঘষতে থাকে।
- আস্তে আস্তে আক্রান্ত গাপ্পি মাছটি দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে ২/৩ দিনের মাথায় মারা যায়।
কমার্শিয়াল ব্রিডিং বিষয়ে জানতে পড়ুন…..
চিকিৎসা
- মাছের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখার সাথে সাথেই অ্যাকুরিয়ামের পানি ৩০-৪০ ভাগ পরিবর্তন করতে হবে।
- পরিবর্তিত পানির প্রতি ১৫ লিটারে ৮ গ্রাম অ্যাকুরিয়াম সল্ট বা সন্ধক লবণ ব্যাবহার করুন।
- তাপমাত্রা ৩০° সেলসিয়াস এর উপরে রাখার ব্যবস্থা করুন।
- গ্রীণ ম্যালাকাইট প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩ ফোঁটা হিসাবে অ্যাকুরিয়ামের পানির পরিমাপে ৩/৪ দিন ব্যবহার করুন।
মাউথ ফাঙ্গাস
লক্ষণ
- গাপ্পি মাছ মাউথ ফাঙ্গাস রোগে আক্রান্ত হলে মাছের ঠোঁটদ্বয় সাদা হয়ে যায়,খাবার খেতে চায়না।
- খাবার না খাওয়ার দরুণ গাপ্পি মাছ দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে যায় ফলে চুপচাপ একজায়গায় স্থির হয়ে ভেসে থাকে বা অ্যাকুরিয়ামের নিচে স্থির হয়ে পড়ে থাকে।
- আক্রান্ত গাপ্পি মাছ ১-২ দিনের মাথায় মৃত্যুবরণ করে।
চিকিৎসা
- আক্রান্ত মাছের লক্ষণ দেখা গেলে প্রতি লিটার পানিতে ১২-১৫ টি পরিমাণ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4) এর দানা ভালোভাবে গুলে নিন তারপর আক্রান্ত মাছগুলোকে ১-২ মিনিট সময় এ পানিতে চুবিয়ে নিন তারপর আবার অ্যাকুরিয়ামে ছাড়ুন।
- এভাবে ৪-৫ দিন ২/৩ বেলা করে করুন।
ড্রপসি

লক্ষণ
- গাপ্পি মাছের ড্রপসি রোগ ভয়ংকর রকমের সংক্রামক রোগ।
- ড্রপসি রোগ হলে চিকিৎসা করার আগেই মৃত্যু বরণ করে অর্থাৎ লক্ষণ প্রকাশ আর মৃত্যুসময় ঘনিয়ে আসা সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।
- ড্রপসি রোগে আক্রান্ত গাপ্পি মাছের আঁইশ গুলো উপরের দিকে ফুলে উঠে।
- আক্রান্ত গাপ্পি মাছের আকৃতি বেলুনের মতো হয়ে যায়।
- আক্রান্তের লক্ষণ প্রকাশের সময়ই ৯৯ ভাগ গাপ্পি মাছই মারা যায়।
চিকিৎসা
- এ রোগের প্রতিকার ব্যবস্থার চেয়ে প্রতিরোধ করা অধিকতর সহজ।
- অ্যাকুরিয়ামের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন, তাপমাত্রা ও পিএইচ স্বাভাবিক থাকলে মাছ এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা কমে যায়।
গাপ্পি মাছের প্রোটোজোয়ান রোগ
গাপ্পি মাছের এই রোগটি একটি পরজীবি সংক্রমণের দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এই রোগটি অন্যান্য একুরিয়ামের মাছের তুলনায় গাপ্পি মাছেই বেশী হয়।
কারণ
- গাপ্পি মাছের প্রোটোজোয়ান রোগের জন্য দায়ী হলো Protozoan নামের একটি ক্ষুদ্র পরজীবি।
- যেসব একুরিয়ামে সূর্যের আলো পায়না এমনকি কৃত্রিম আলোও পায়না সেইসব ট্যাংকে এই পরজীবি সংক্রমণের সম্ভবনা বেশি।
- একুরিয়ামের পানির মান খারাপ হলেও এই পরজীবির সংক্রমণ দেখা যায়।
- প্রোটোজোয়ান পরজীবি প্রথমে মাছের ত্বকে বাসা বাধলেও আস্তে আস্তে তা ত্বক, মাংস ভেদ করে মাছের রক্ত ধারায় মিশে যায়।
লক্ষণ
- মাছের শ্বাস নিতে কষ্ট হবে,তাই হাঁপাতে থাকবে।
- একুরিয়ামের পানির উপরের স্তরে এসে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবে।
- পাখনাগুলো একসাথে হয়ে থাকবে।
- একুরিয়ামে থাকা কোনো কিছুর সাথে শরীর ঘষতে থাকবে।
চিকিৎসা
- একুরিয়ামের পানির তাপমাত্রা স্ট্যাবল করতে হবে।এজন্য হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- পাশাপাশি মোট পানির ৪০/৫০ ভাগ করে সপ্তাহে ২/৩ করে পরিবর্তন করতে হবে।
- প্রাথমিক পর্যায়ে ম্যালাকাইট গ্রীন কিংবা ফরমালিন দিয়েও এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- রোগ সংক্রমণের মাত্রা বেশী হলে কপার সমৃদ্ধ ঔষধ “সী-ক্যাম কিউপ্রামিন” ব্যবহার করলে ভালো হবে।
- পাশাপাশি একজন মৎস্য চিকিৎসক এর নির্দেশনা মেনে চলুন।
টিউবারকুলোসিস বা মাছের যক্ষা রোগ
মানুষের যক্ষা রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার গণের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মাছের এই রোগ হয় বলে একে মাছের টিউবারকুলেসিস বা মাছের যক্ষা বলে।
কারণ
- গাপ্পি মাছের টিউবারকুলোসিস বা যক্ষা রোগটি হয় Mycobacterium গণের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের দ্বারা।
- অন্য একুরিয়াম হতে রোগাক্রান্ত মাছ বা প্লান্ট কোনো প্রকার পরিশোধন ছাড়াই এনে একুরিয়ামে ছাড়লে মাছের মাঝে এই রোগ বংশবৃদ্ধি করে।
- যক্ষা রোগে মৃত মাছের পঁচা অংশ অন্য মাছ খেলেও তারা এই রোগে আক্রান্ত হবে।
- যক্ষা রোগে আক্রান্ত মাছের ফ্রাইগুলোও এই রোগে আক্রান্ত হবে।
লক্ষণ
মাছের যক্ষা রোগ হলে স্পষ্ট কোনো লক্ষণ নাও প্রকাশিত হতে পারে।তবে অনেকসময় যেসব লক্ষণ দেখা যায় ত হলো-
- আক্রান্ত মাছের খাবার গ্রহণের চাহিদা কমে যাবে।
- মাছের মলদ্বার ও শরীরে ক্ষত দেখা যাবে।
- পাখনা ও লেজ বিবর্ণ হতে থাকবে এবং পচন ধরবে।
- আস্তে আস্তে মাছ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং একসময় মারা যাবে।
- মাছের যক্ষা রোগ হলে একুরিয়ামের মাছ অনির্দিষ্টহারে মারা যেতে থাকবে।
চিকিৎসা
- মাছের যক্ষা রোগের চিকিৎসা তেমন সহজ নয়।
- আক্রান্ত ও মৃত মাছকে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
- আক্রান্তের লক্ষণ দেখা যাওয়া মাছগুলোকে অন্য পাত্রে রাখতে হবে।
- আক্রান্ত মাছগুলোর চিকিৎসার জন্য নিওমাইসিন, কানামাইসিন বা আইসোনিয়াজিড অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারেন।
- একুরিয়ামের পানিতেও অল্প পরিমাণে এই ঔষধ দিতে পারেন তবে দেওয়ার দুদিন পর একুরিয়ামের পানি ৫০ ভাগ পরিবর্তন করবেন।
গাপ্পি মাছের পপড আই ( Popped eye ) বা চোখ বেরিয়ে আসা রোগ
গাপ্পি মাছের পপ’ড আই বা চোখ বাইরের দিকে বেরিয়ে আসা রোগটি কোনো মরণঘাতী রোগ নয় তবে এই রোগ হলে আক্রান্ত মাছটি অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কারণ
- Popped eye রোগটি অনেক কারণেই হতে পারে যেমনঃ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, ড্রপসি রোগের জন্য দায়ী ফাঙ্গাস, টিউকুলোসিস থেকেও হতে পারে, একুরিয়ামের পানির মান খারাপ হলেও এই রোগ হতে পারে।
- এছাড়াও বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ পরজীবির সংক্রমণেও এই রোগ হয়
লক্ষণ
- চোখের পেছনের অংশের তরলসমৃদ্ধ বল ফুটো হওয়ার কারণে চোখ ফুলতে থাকবে।
- চোখের রং নষ্ট হয়ে যেতে থাকবে।
চিকিৎসা
- গাপ্পি মাছের পপড আই রোগের চিকিৎসা অনেকটা কষ্ট সাধ্য কেননা কোন কারণে এই রোগটি হয়েছে সেটা খুঁজে পাওয়া যায়না।
- এক্ষেত্রে আপনি এন্টি-ব্যাকটেরিয়া ও এন্টি -ফাংগাল মেডিসিন ব্যবহার করলে ফল পাবেন।
- মৎস্য চিকিৎসা করে এমন পশুচিকিৎসক এর পরামর্শ মেনে চলুন।
গাপ্পি মাছের ফুলকা ফোলা রোগ
ফুলকা ফোলা ( Swollen gill) রোগকে অনেকে মাছের হাঁপানী রোগও বলেন।এই রোগে মাছের প্রধান শ্বসন অঙ্গ ফুলকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কারণ
- ফুলকা ফোলা রোগের জন্য প্রধানত দায়ী হলো অ্যামোনিয়া ও কার্বনেট।
- অ্যামোনিয়া মূলত মাছের অতিরিক্ত খাবার, বিভিন্ন জৈব পদার্থ ও নির্গত বর্জ্য পদার্থ পঁচে উৎপন্ন হয়।
- একুরিয়ামে ব্যবহৃত বিভিন্ন পাথর ও বালিতে কার্বনেট পাওয়া যায়।
লক্ষণ
- পানিতে তৈরী হওয়া অ্যামোনিয়া মাছের ফুলকাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
- ফুলকা দ্রুত নাড়াতে দেখা যাবে মাছের ফুলকাগুলো পোড়ার মত লাগবে এবং ফুলতে থাকবে।
- নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে তাই একুরিয়ামের পানির উপরের স্তরে এসে মাছ হাঁপাতে হাঁপাতে নিঃশ্বাস নিতে দেখা যাবে।
চিকিৎসা
- একুরিয়ামের মোট পানির ৫০ ভাগ পানি পরিবর্তন করুন।এক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন একুরিয়ামের নিচের দিকের বর্জ্যসহ পানি ফেলে দিয়ে নতুন পানি দিতে।
- পানির তাপমাত্রা, পিএইচ এবং পানিতে অ্যামোনিয়ার মাত্রা মেপে দেখুন।
- মাছের খাবার দেওয়া দু-তিনদিন বন্ধ রাখুন।
- একুরিয়ামের পানিতে থাকা অ্যামোনিয়া নষ্ট করার জন্য নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া এড করতে পারেন।
- একুরিয়ামে জীবন্ত উদ্ভিদের পরিমাণ বৃদ্ধি করলেও অ্যামোনিয়া উৎপাদন কমে যাবে।
ফুলকা পঁচা রোগ
গাপ্পি মাছের ফুলকা পঁচা রোগ সচরাচরই দেখা যায়।এই রোগে আক্রান্ত মাছের শরীরের রক্ত শুষে নেয় পরজীবিগুলো।
কারণ
- গাপ্পি মাছের ফুলকা পঁচা রোগের জন্য দায়ী সাদা কীটগুলোকে খালি চোখেই দেখা যায়।
- নতুন একুরিয়ামগুলোতে এই রোগের বিস্তার ঘটে সাধারণত কেনা মাছ ও গাছের মাধ্যমে।
- তাই কেনা মাছ ও গাছগুলোকে প্রথমে অন্য পাত্রে কয়েকদিন রেখে দেখতে হবে নতুন মাছগুলো রোগাক্রান্ত হয় কিনা।
- আক্রান্ত না হলে একুরিয়ামে ছেড়ে দিবেন।
লক্ষণ
- আক্রান্ত মাছের ফুলকা থেকে রক্তপাত হবে।
- ফুলকা পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবেনা।
- একুরিয়ামের নিচের দিকে শ্বাস গ্রহণ করতে পারবেনা তাই উপর দিকে উঠে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে শ্বাস নিতে দেখা যায়।
চিকিৎসা
- একুরিয়ামের পানির মান ভালো রাখতে হবে এজন্য পানি পরিবর্তন করা যেতে পারে।
- ফুলকা পঁচা রোগে আক্রান্ত মাছের জন্য একুরিয়ামের পানিতে স্টেরাজিন ও অক্টোজিন ব্যবহার করতে হবে।
- যার ফলে দায়ী কীট ও পরজীবিগুলো মারা যাবে।
- মৃত পরজীবিগুলোর রেখে যাওয়া ডিম ফুটে নতুন পরজীবি যেনো না হয় এজন্য একুরিয়ামের পানিতে টানা ৫-৭ দিন ঔষধগুলো প্রয়োগ করতে হবে।
গাপ্পি মাছের রেড ব্লাড স্পট রোগ
গাপ্পি মাছের পেটের দিকে কিংবা সারা শরীরে অনেকসময় রক্তের ন্যায় লাল বর্ণের দাগ দেখা যায় যা Red blood spot রোগ নামে পরিচিত।
কারণ
- গাপ্পি মাছের রেড ব্লাড স্পট রোগের জন্য দায়ী হলো অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইট বিষক্রিয়া।
- নতুন একুরিয়ামগুলোতে অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইট ডিফর্ম বা নষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন না হওয়ায় নতুন একোয়ারিস্টরা এই সমস্যায় বেশী ভুগেন।
- একটি নতুন একুরিয়ামের পানিতে অ্যামোনিয়া ও নাইট্রেট চক্র ঠিকঠাক চালু হতে ৫-৬ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
লক্ষণ
- আক্রান্ত মাছটির শ্বাস নিতে কষ্ট হবে তাই পানির উপর পৃষ্ঠে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে শ্বাস নিতে থাকবে।
- ফুলকা, পেটের দিক কিংবা সারা শরীরে লাল রঙ ধারণ করবে, দেখে মনে হবে রক্তপাত হচ্ছে
চিকিৎসা
- ঘনঘন পানি পরিবর্তন করতে হবে।
- পানিতে মাছের বর্জ্য ও অতিরিক্ত খাবার পঁচে অ্যামেনিয়া ও নাইট্রেট উৎপন্ন হয় তাই এসব প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন অপসারণ করতে হবে।
- মনে রাখতে হবে সামান্য মাত্রার অ্যামোনিয়াও মাছের জন্য ক্ষতিকর।
- একুরিয়ামে পর্যাপ্ত জীবন্ত উদ্ভিদ লাগাতে হবে।দিনে একবেলা খাবার দিতে হবে।
গাপ্পি মাছের পটকা ফোলা রোগ
মাছের পটকা বা swim bladder হলো একটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যা বাতাস ও গ্যাস দ্বারা পূর্ণ থাকে, এটি মাছের সাঁতার ও পানির মাঝে ভেসে থাকতে সহায়তা করে।
কারণ
- গাপ্পির একুরিয়ামের মাছের সংখ্যা বেশী হলে মাছের পটকা সমস্যা হয়।
- কম পানির একুরিয়াম থেকে হঠাৎ করেই বেশী পানিতে ছেড়ে দিলেও এই সমস্যা হয়।
- পানিতে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বেড়ে গেলেও গাপ্পি মাছের পটকা সমস্যা হয়।মাছের হজম সমস্যার জন্যও এই রোগ হয়।
লক্ষণ
- পটকা ফোলা সমস্যা রোগে আক্রান্ত গাপ্পি মাছ পানির মাঝে ভারসাম্য ধরে রাখতে পারবেনা।
- উল্টো হয়ে ভাসতে থাকবে।
- সাঁতার কাটতে সমস্যা হবে।
- তাই আক্রান্ত গাপ্পি মাছকে একুরিয়ামের এক কোণে শান্ত থাকতে দেখা যাবে।
- আক্রান্ত গাপ্পি মাছের পেট ফোলা দেখা যাবে।
চিকিৎসা
- আক্রান্ত গাপ্পি মাছের একুরিয়ামের পানির মান ঠিক রাখতে হবে।
- পানির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে যা হবে মাছের উচ্চতার চেয়ে একদু ইঞ্চি বেশী।
- ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে গাপ্পি মাছের পটকা ফোলা রোগ হলে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেই হবে।
- হজম সমস্যার জন্য গাপ্পি মাছের এই রোগ হলে মাছকে দু তিন দিন খাবার না দিলেই হবে।
- একুরিয়ামের পানিতে একুরিয়াম সল্ট ব্যবহার করতে হবে।
গাপ্পি মাছের VHC রোগ
Viral Haemorrhagic Septicaemia (VHC) রোগটি গাপ্পি মাছের একট ভাইরাসবাহিত মারাত্নক সংক্রামক রোগ।
কারণ
- গাপ্পি মাছের রক্তের মধ্যে একটি ভাইরাস দ্বারা এই রোগ সৃষ্ট হয়।দায়ী ভাইরাসটিকে লাল কীট নামেও ডাকা হয়।দায়ী ভাইরাসটি গাপ্পি মাছের সংবহনতন্ত্রে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে যাবে। ভাইরাস শরীরের টিস্যু, রক্তনালী এবং হার্টের ক্ষতি করে এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটায়।
লক্ষণ
- ভাইরাল হেমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া রোগের প্রথম লক্ষণ হলো আক্রান্ত গাপ্পি মাছের শরীরে ক্ষত দেখা যাবে।
- ক্ষত থেকে ঘা তৈরি হবে এবং পাখনা পঁচতে শুরু করবে।
- আক্রান্ত গাপ্পি মাছের ফুলকা বিবর্ণ হবে এবং চোখ ফুলে যাবে।
- আক্রান্ত গাপ্পির খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যাবে।
চিকিৎসা
- আক্রান্ত গাপ্পি মাছের একুরিয়ামের পানি চিকিৎসার আগে ও পরে পরিবর্তন করতে হবেে।
- এন্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করা লাগবে যেমনঃMaracyn 2, API, Furan 2 VHS.
গাপ্পি মাছের স্কোলিওসিস বা মেরুদন্ড বাঁকা রোগ
গাপ্পি মাছের এই রোগটি বেন্ট স্পাইন নামেও পরিচিত।এই রোগে আক্রান্ত মাছের মেরুদণ্ড ইংরেজি অক্ষর S বা C এর মতো দেখাবে।
কারণ
- একুরিয়ামের পানির মান ঠিক না থাকলে গাপ্পি মাছ স্কোলিওসিস রোগে আক্রান্ত হবে।
- পঁচা ও পুষ্টিহীন খাবারের জন্য মাছ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
- বংশগত কারণেও গাপ্পি মাছের স্কোলিওসিস রোগ হতে পারে।
লক্ষণ
- আক্রান্ত গাপ্পি মাছের সাঁতার কাটতে সমস্যা হবে।
- খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে ফলে মাছ দুর্বল হয়ে পড়বে।
- আক্রান্ত মাছের বৃদ্ধি ও প্রজননহার কমে যাবে।
চিকিৎসা
- দুর্ভাগ্যবশত গাপ্পি মাছের মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।
- স্কোলিওসিস কোনো সংক্রামক রোগ নয় তবে বংশপরম্পরায় থেকে যাবে এই রোগ।
- বাঁকা মেরুদণ্ড নিয়েও গাপ্পি মাছ ভালোভাবে জীবন চালাতে পারে যদি একুরিয়ামের পানি ও খাবার মান ভালো হয়।
গাপ্পি মাছের সকল রোগের সাধারণ চিকিৎসা
- একুরিয়ামের পানির তাপমাত্রা (২৫-২৭)° সেলসিয়াস ও খরতা (৭-৮) ডিজিএইচ এর মাঝে রাখুন।
- অসুস্থ মাছের একুরিয়ামে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া যাবেনা।
- নির্দিষ্ট রোগের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- প্রতি গ্যালন পানিতে ১ চা চামচ হারে অ্যাকোয়ারিয়াম লবণ দিন এবং তা ৪-৭ দিনের জন্য রাখুন।
- একুরিয়ামের প্রায় ৫০-৬০ ভাগ পানি পরিবর্তন করুন। অসুস্থ মাছগুলি আলাদা ট্যাঙ্কে সরিয়ে রাখুন।
আজ এতটুকুই।মাছের যেকোনো সমস্যা জানাতে ও দ্রুত সমাধান পেতে আমাদের সাথে
রেফারেন্স
গাপ্পি উইকিপিডিয়া , গাপ্পির রোগ
আরোও পড়ুন
guppy diseasesGuppy fishGuppy fish lifespanGuppy temperatureএ্যাকুয়ারিয়ামএ্যাকুয়ারিয়ামে গাপ্পি মাছের চাষগাপ্পি মাছগাপ্পি মাছের রোগের লক্ষণগাপ্পির রোগ এর প্রতিকারগাপ্পির রোগসমূহমিক্স গাপ্পি

