পদ্ম গোখরা সাপ এর আবাস,খাদ্যাভ্যাস,বিষক্রিয়া বিষয়ে জানুন

পদ্ম গোখরা সাপ এর আবাস,খাদ্যাভ্যাস,বিষক্রিয়া বিষয়ে জানুন

পদ্ম গোখরা সাপ এর সাধারণ পরিচিতি

মনোক্লেড গোখরা স্থানীয়ভাবে পদ্ম গোখরা বা গোক্ষুর গোখরা বা গোমা সাপ নামে পরিচিত। পদ্ম গোখরার ফনার পেছনে ইংরেজি অক্ষর  “O” বা মানবচক্ষু বা গরুর ক্ষুরের মতো চিহ্ন থাকে।বাচ্চা সাপের রং এর তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়না।সাধারণত এই সাপের গায়ে বাদামি, কালচে বাদামি, হলুদ, ছাই বা কালো রংয়ের ক্রসব্যান্ড দেখা যায়। ফণার দু’ধারে নিচের দিকে কালো মোটা বা চিকন ছোপছোপ দাগ দেখা যায় এবং ছোপছোপ দাগের পশ্চাৎ অংশ থেকে এক বা দুইটি কালো রেখা পেটের দিকে নামে।বয়স বাড়ার সমানুপাতে এদের শরীরের রং ফ্যাকাশে হতে থাকে।
পদ্ম গোখরার ঘাড়ে ২৫ -৩১ টি আঁইশ,শরীরে ১৯-২১ টি আঁইশ এবং পায়ুপথের সামনের দিকে ১৫-১৭ টি আঁইশ থাকে।মনোক্লেড গোখরার উদরীয় আঁইশ ১৬৪- ১৯৭ টি এবং সাবকডাল আঁইশ ৪৩-৫৮ টি। এদের সামনের দিকের আঁইশ গুলো সংক্ষিপ্ত ও বর্গাকার ।পুরুষ সাপের উদরীয় আঁইশের সংখ্যা ১৭০-১৯২ টি যা মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৭৮-১৯৭  টি।
পূর্ণ বয়স্ক মনোক্লেড গোখরা সাধারণত ৪.৪- ৪.৯ ফুট পর্যন্ত হয়। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা সর্বোচ্চ ৭.৫ বা ৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।গোখরার আরোও বড় আকারের প্রজাতি পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা বিলুপ্ত।

মনোক্লেড/ পদ্ম গোখরা সাপ এর নামকরণ

পদ্ম গোখরো সাপের ফণার পেছনে গরুর ক্ষুরের ন্যায় এল ধরণের চিহ্ন থাকে বলে একে গোক্ষুরো গোখরো সােও বলা হয়। আবার এই সাপটিকে ইংরেজিতে মনোক্লেড কোবরা নামে বলা হয়। মনোক্লেড মানে হলো এক চোখা। মনোক্লেড বলার কারণও একই। যে চিহ্নটিকে গরুর ক্ষুরের মত দেখা যায় ওই চিহ্নটা আবার অনেকটা এক চোখা চশমার মতোও লাগে।তাই এই সাপটিকে মনোক্লেড কোবরা/গোখরো নামেও ডাকা হয়।

অত্যন্ত সুন্দর ও মারাত্নক বিষধর সামুদ্রিক সাপ ইয়েলো বেলিড সী স্নেক বা হলুদ পেটের সামুদ্রিক সাপ সম্পর্কে না জেনে থাকলে এখনই জেনে নিন

পদ্ম গোখরোর বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস

Kingdom: Animalia
   Phylum: Chordata
     Class: Reptilia
       Order: Squamata
         Suborder: Serpentes
           Family: Elapidae
             Genus: Naja
               Species: Najkauthia

পদ্ম গোখরা
ছবিঃ পদ্ম গোখরা

বৈজ্ঞানিক নামকরণের ইতিহাস

১৮৩১ সালে বিজ্ঞানী রেন লেসন মনোক্লেড কোবরাকে একটু সুন্দর সাপ হিসাবে বর্ণনা করে এর বৈজ্ঞানিক নাম হিসাবে Naja kaouthia প্রস্তাব করেন। যা খৈয়া গোখরা বা স্পেকটাক্যাল গোখরা হতে ভিন্ন এবং এর ১৮৮ টি উদরীয় আঁইশ ও ৫৩ জোড়া পুচ্ছ আঁইশ থাকে।
১৯৪০ সালে ম্যালকম আর্থার স্মিথ মনোক্লেড গোখরাকেত্রিমাত্রিক নাম Naja naja kaouthia এর অধীনে খৈয়া গোখরার উপ প্রজাতি হিসাবে আওতাভুক্ত করেন।কিন্তু ১৯৯০ এর দশকে পুনঃশ্রেণীকরণের সময় Naja kaouthia  কে আলাদা করা হয় যা মনোক্লেড গোখরা বা পদ্ম গোখরার বৈজ্ঞানিক নাম হিসেবে পরিচিত।

এক কামড়েই মৃত্যু হতে পারে এমন সাপ এর একটি হলো রাসেল ভাইপার। এখনই জেনে নিন সাপটি দেখতে কেমন এবং বাচার উপায়

মনোক্লেড গোখরা সাপ এর আবাস

মনোক্লেড গোখরা এর আদিনিবাস বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম,  চীন, কম্বোডিয়া ও মালয় দীপপুঞ্জ।
বাংলাদেশের সকল অঞ্চলেই এই সাপের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। খাদ্য শিকারের প্রয়োজনে এরা সাধারণত বাসাবাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়, ফসলের মাঠ, পুকুর, নদী, বিল বা জলাশয়ের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করে। আবার প্রজননের জন্য বা বর্ষাকালে বন্যার পানি থেকে রেহায় পাবার জন্য এরা মানুষের বাসাবাড়িতে ঢুকে যেতে পারে। এমতাবস্থায় সাপটিকে না মেরে স্নেক রিস্কুয়ার দ্বারা প্রকৃতিতে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দিন।

পদ্ম গোখরা সাপ এর স্বভাব

এই জাতের গোখরা সাপ নিশাচর অর্থাৎ তারা শিকারের জন্য রাতের বেলায় বের হয়।এদের সাধারণত বিভিন্ন গর্তে পাওয়া যায় যেমনঃ মানুষের বাসাবাড়িতে কিংবা ফসলি জমিতে ইঁদুরের গর্তে, পঁচা গাছের গুঁড়ির গর্তে পাওয়া যায়। এরা কোনস্থানে থাকার সময় বিরক্ত হলে পালাতে চায় কিন্তু বাধা পেলে প্রথমে ফণা তুলে হিস হিস শব্দ করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।কিন্তু প্রাণ সংশয়ের কারণ মনে হলে আক্রমণ করে।

অনেক সাপের মতো পদ্ম গোখরা ফণা তুলতে পারলেও এমন একটি সাপ আছে যেটি ফণা তুলতে পারেনা।তবে এটা পদ্ম গোখরার চেয়েও ভয়ানক।সাপটি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে ক্লিক করুন

পদ্ম গোখরা সাপ এর শিকার ও খাদ্যাভাস

বাচ্চা গোখরার খাদ্যতালিকায় উভচর প্রাণী থাকলেও প্রাপ্ত বয়স্ক পদ্ম গোখরার খাদ্য তালিকায় স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন ইঁদুর, টিকটিকি, চিকা, পাখি, ব্যাঙ, মাছ এমনকি এরা ভিন্ন প্রজাতির সাপ ও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ফসলি জমিতে অবস্থানের সময় এরা ফসলের বিভিন্ন পোকামাকড় খায়। মনোক্লেড গোখরা সবসময়ই তাজা প্রাণী খায় তবে তীব্র ক্ষুধা কিংবা খাদ্য সংকটে এরা মৃত প্রাণীও খায় যেটার নজির খুবই কম।এই সাপ তার গ্রহণকৃত খাবারের হাড় হজমের জন্য নিজের বিষ ব্যবহার করে।

পদ্ম গোখরা সাপ এর প্রজনন

পদ্ম গোখরা একটি ওভিপোরাস প্রজাতি। জানুয়ারি থেকে মার্চ এই সময়টায় স্ত্রী সাপটি প্রতি বারে ১৬ থেকে ৩৩ টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী সাপটি তার বসবাসের জায়গায় ডিম দেয় এবং বাচ্চা না ফোটা পর্যন্ত ডিমের সাথেই থাকে।ডিম এর ইনকিউবেশন পিরিয়ড অর্থাৎ ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৫৫ থেকে ৭৩ দিন পর্যন্ত সময় লাগে

পদ্ম গোখরা সাপ
ছবিঃ পদ্ম গোখরা সাপ

পদ্ম গোখরা সাপ এর বিষক্রিয়া

মনোক্লেড কোবরা তীব্র বিষধর। এর দুটি সরু, লম্বা বিষ দাঁত আছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় বিষ দাঁত প্রায় ০.৬৭৮ সে.মি. বা ৬.৭৮ মি.মি. লম্বা। বিষদাঁতগুলো নিউরোটক্সিক বিষ উৎপন্ন করে।
তবে এরা আক্রমণ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষ ঢালেনা কেননা এই বিষ তাদের গ্রহণকৃত খাবারের হাড় হজমে কাজে লাগে।তবে মুখে বা বিষথলিতে আঘাত পেলে বয়স্ক সাপগুলো শিকারের গায়ে বিষ ঢালে তবে বাচ্চা সাপেরা অধিকাংশই শিকারের শরীরে বিষ ঢালে।
পদ্ম গোখরার বিষের প্রধান উপাদান হলো পোস্টসিনাপটিক নিউরোটক্সিন যা মূলত শরীরে প্রবেশ করে নিকোটিনিক অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে স্নায়ু কার্যক্রমকে অবরুদ্ধ করে,যার দরুণ ফ্ল্যাসিড পারালাইসিস ও হার্ট এট্যাক করে আক্রান্ত ব্যাক্তি মারা যেতে পারে। মনোক্লেড কোবরার বিষের প্রধান α-নিউরোটক্সিন হল একটি দীর্ঘ নিউরোটক্সিন, α-কোব্রেটক্সিন। এই সাপের বিষে মনোটক্সিন ও কার্ডিওটক্সিন ও পাওয়া যায়।

পদ্ম গোখরা সাপ কাটলে যেসব লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়

পদ্ম গোখরা কাটলে রোগীর শরীরে ইনস্ট্যান্ট কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়না তবে ঘন্টা দুয়েক পর  রোগীর শরীরে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়
১) শরীর ঝিমিয়ে আসবে।
২)শরীরের শক্তি কমে যাবে।
৩) ঘুম ঘুম ভাব হবে।
৪)চোখ লেগে আসবে।
৫)আক্রান্ত স্থান ও ঐ স্থানের আশেপাশের অংশ ফুলে যাবে।
৬)বমি বমি ভাব হবে।
৭)রোগীর স্মৃতি শক্তি আস্তে আস্তে লোপ পাইতে থাকে।

সুন্দর সাপ সম্পর্কে জানতে এখনই দেখুন….

সংরক্ষণ আইন

আবাস্থল ধ্বংস, মানুষের অসচেতনতা, অন্ধিবিশ্বাস, ভুল ধারণা এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের জন্য  কারণে এদের জীবনযাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এজন্য  আইইউসিএন (IUCN) কর্তৃক ” ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত”  তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
পদ্ম খোখরা বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে  সংরক্ষিত। 

রেফারেন্স

রিসার্চগেটউইকিপিডিয়া

আরোও পড়ুন


Leave a Comment

Fast & Free Delivery
Safe & Secure Payment
100% Money Back Guarantee
X