গাপ্পি মাছের প্রজনন, মা গাপ্পি ও বাচ্চা গাপ্পি মাছের খাবার সম্পর্কে জানুন

গাপ্পি মাছের প্রজনন, মা গাপ্পি ও বাচ্চা গাপ্পি মাছের খাবার সম্পর্কে জানুন

প্রজনন কি?

প্রজনন হল এমন একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যা দ্বারা জীব অর্থাৎ  উদ্ভিদ এবং প্রাণী তার প্রতিরুপ বা বংশধর সৃষ্টি করে। পৃথিবীতে জীবনের মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে প্রজনন প্রক্রিয়া।

প্রজনন দুই প্রকারে সম্পন্ন হয়।
১) যৌন প্রজননঃ ছেলে ও মেয়ে প্রজাতির যৌন মিলন হতে হয়। গাপ্পি মাছের প্রজনন যৌন প্রজনন।
২) অযৌন প্রজননঃ এটা পরাগায়ন বা বিভিন্ন মাধ্যমে হয়।

গাপ্পি মাছের প্রজনন

গাপ্পি মাছের প্রজনন ওভোভিভিপোরাস ধরণের অর্থাৎ মেয়ে গাপ্পি মাছ প্রথমে তার পেটে ডিম ধারণ করে এবং পেটেই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা হিসেবে প্রসব করে। ছেলে ও মেয়ে গাপ্পি মাছের নিষেক ( একটি মেয়ে গাপ্পি মাছ সাধারণত অনেকগুলা পুরুষ গাপ্পি মাছের সাথে মিলিত হয়) সম্পন্ন হওয়ার পর মেয়ে গাপ্পি মাছের পেটে ডিম উৎপন্ন হয় যা মাছের পেটেই পরিপক্ব ফ্রাই বা শিশু গাপ্পি মাছের পরিণত হয় এবং তারপর তা ভূমিষ্ঠ হয়। মেয়ে গাপ্পি মাছ মিলনে প্রাপ্ত স্পার্ম বা শুক্রাণু তার ডিম্বনালীতে ৬ মাস পর্যন্ত সঞ্চয় করে রাখতে পারে এবং দফায় দফায় তার থেকে নতুন বাচ্চা প্রসব করে। বাংলাদেশে প্রায় ১৮-১৯ প্রজাতির গাপ্পি মাছ পাওয়া যায়।যেমনঃ ব্ল্যাক মস্কো গাপ্পি,রেড টেইল প্লাটিনাম গাপ্পি, কই টক্সিডো গাপ্পি,ফুল হোয়াইট গাপ্পি, ফুল রেড গাপ্পি ইত্যাদি। গাপ্পি মাছের একই জাতের ছেলে ও মেয়ে যদি আপনি এক ট্যাংকে রাখেন তবে ওই নির্দিষ্ট জাতের গাপ্পি মাছেরই নতুন ফ্রাই পাবেন। আবার যদি ভিন্ন জাতের ছেলে ও মেয়ে গাপ্পি মাছ এক ট্যাংকে রাখেন তবে ওইসব গাপ্পি মাছের প্রজনন এ আপনি সাধারণত মিক্স গাপ্পি মাছের নতুন মাছ পাবেন।

গাপ্পি মাছের বাজার দাম জানার জন্য পড়ুন..

গাপ্পি মাছের প্রজনন
ছবিঃ গর্ভবতী গাপ্পি মাছ

গাপ্পি মাছের প্রজননের লক্ষণসমূহ

১. গাপ্পি মাছের প্রজননের জন্য পুরুষ গাপ্পি মাছ, মেয়ে গাপ্পি মাছের পিছনে পিছনে ছুটে এবং তাদের পিছনের লেজ নাড়িয়ে  মেয়ে গাপ্পি মাছটিকে প্রজননে প্রলুব্ধ করতে চেষ্টা করে।
২.প্রসবের আগে মেয়ে গাপ্পি মাছের নড়াচড়া কমে যায়,খাবারের ইচ্ছে কম দেখা যায়।
৩.এসময় গাপ্পি মাছটি কাঁপতে থাকে এবং গরম বা উষ্ণ স্থানের কাছাকাছি থাকতে চায় যেমনঃ পানিতে হিটার থাকলে এর কাছাকাছি অবস্থান করে।

গাপ্পি মাছের প্রজননের জন্য একুরিয়াম বা জলাধার প্রস্তুতি

গাপ্পি মাছের প্রজনন
ছবিঃ গাপ্পি মাছের প্রজননের জন্য একুরিয়াম

১. এক্ষেত্রে আপনি বড় সাইজের একুরিয়াম বা সিমেন্টের তৈরী চোবাচ্চা বা ড্রাম বা ফলের ঝুড়ি গুলো দুটো জোড়া দিয়া আবাস তৈরী করতে পারেন।


২. এরপর পরিমাণমত পানি দিবেন।আমার পরামর্শ হবে জলাধারের ৩/৪ অংশ অর্থাৎ চারভাগের তিনভাগ পানি দ্বারা পূর্ণ করবেন।পানিতে কিংবা জলাধারে যাতে কোনো ক্যামিকেল প্রোডাক্ট না থাকে।যদি থাকে তবে পানিপূর্ণ করে ৪/৫ দিন রেখে দিন  তারপর পানি পরিবর্তন করে মাছ ছাড়ুন।

আপনার শখের একুরিয়ামটি কিভাবে সাজাবেন জানার জন্য পড়ুন…

৩. যেহেতু গাপ্পি মাছ বাচ্চা দেবার পর বাচ্চা খেয়ে ফেলে তাই বাচ্চা লুকানোর জন্য এবং পানির মান ভালো রাখার জন্য জীবন্ত প্লান্ট দিতে হবে।যা পানি থেকে বিভিন্ন টক্সিক উপাদান শোষণ করে পানিকে মাছের জন্য  বাসোপযোগী করে রাখবে।


৪. পানিতে প্লাস্টিকের কোনো কিছু যেমন গাছ রাখবেননা।বড় পাথর রাখলেও মাছের লেজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।তবে এক্ষেত্রে আপনি বালি দিতে পারেন সাধারণগুলো।কালারফুল বা ক্যামিকেল যুক্ত উপাদান না দেয়াই ভালো।


৫. সব ব্যবস্থাপনা শেষে পানির তাপমাত্রা যা হবে  ২৭ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পিএইচ হবে ৭.২ থেকে ৭.৫। সব ঠিক করা হলে আপনি নিশ্চিন্ত মনে মাছ ছাড়ুন।তবে অধিক মাছ একসাথে ছোট ট্যাংকে ছাড়বেননা।

গাপ্পি মাছের প্রজনন
ছবিঃ মা গাপ্পি মাছ


৬. মাছ ছাড়ার পর পানির ফিলট্রেশনের জন্য ভালোমানের একটি এয়ার পাম্প কিংবা ওয়াটার ফিল্টার লাগাবেন।যা পানির পরিমাণ অনুযায়ী কাজ করবে।চেষ্টা করবেন দেয়া পানির চেয়ে বেশী পরিমাণের পানি ফিল্টার করতে পারবে এমন পাম্প লাগাতে।পানিতে ফিল্টার বা অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করলে পানিতে অক্সিজেনের   অভাব হবে না যার ফলে সাধারণত জলাধারে যে পরিমাণ মাছ রাখবার নিয়ম তার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশী মাছ রাখতে পারবেন৷ এবিষয়ে আরো কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে যোগাযোগ করুন


৭. নিয়মিত জলাধারের জলের ২০/৩০ ভাগ পরিবর্তন করতে হবে।এখানে নিয়মিত বলতে ৭/৮ দিন পর পর জলাধারের সমগ্র পানির ২০/৩০ ভাগ আপনি ফেলে দিয়ে নতুন পানি এড করবেন।তবে একুরিয়াম বা জলাধারে ভালো পরিমাণ লাইভ প্লান্ট ও ভালো মানসম্পন্ন এয়ার পাম্প থাকলে ১০/১৫ দিন পরপরও করা যায়। পানি পরিবর্তন করার সময় আপনি জলাধারের নিচের অংশ থেকে পানি ফেলবেন এর জন্য চিকন পাইপের এক মাথা জলাধারের তলায় ডুবিয়ে দিয়ে আরেক মাথায় মুখ লাগিয়ে চোষণ দিবেন তবে খেয়াল রাখবেন সময়মত মুখ সরিয়ে নিবেন নাহলে পানি মুখে চলে যাবে। পানি পরিবর্তন না করলে পানিতে পড়া মাছের বর্জ্য ও অতিরিক্ত খাবার, পানি ও জলাধারের অবস্থা নষ্ট করে যার ফলে মাছের জন্য বাজে অবস্থা তৈরী হয়। এর ফলে গাপ্পি মাছের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ হয়, রোগগুলোর লক্ষণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ প্রণালী বিষয়ে জানতে চাইলে পড়ুন….

গাপ্পি মাছের প্রজনন
ছবিঃ গাপ্পি মাছের প্রজনন

গাপ্পি মাছের প্রজননের জন্য নেয়া পদক্ষেপসমূহ

১. যখনই বুঝতে পারবেন মেয়ে গাপ্পি মাছগুলো বাচ্চা পেটে তখনই চেষ্টা করবেন ছেলে গাপ্পি মাছগুলো অন্য জলাধারে সরিয়ে ফেলতে।


২. তারপর বাচ্চা জন্মদানের সাথে সাথে মা গাপ্পি মাছগুলোকেও অন্য একুরিয়াম বা জলাধারে সরিয়ে ফেলবেন।


৩. যদি দুইটির একটিও না করতে পারেন তবে চেষ্টা করবেন জলাধারে লাইভ প্যান্টের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে যাতে বাচ্চা গাপ্পিগুলো লুকাতে পারে।


৪. এসবের পেছনে মূল কারণ হলো গাপ্পি মাছের প্যারেন্টাল কেয়ার একদমই নাই।গাপ্পি মাছ তাদের সদ্য জন্মদেয়া বাচ্চাকেই তারা খাবার হিসেবে খেয়ে ফেলতে পারে।যা কমার্শিয়ালি আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে নেট ব্রিডিং পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

গাপ্পি মাছের আবাস,খাদ্যাভ্যাস জানার জন্য পড়ুন…

গাপ্পি মাছের প্রজননের সময় মা গাপ্পি মাছের খাবার
১. বাজারে বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায় এসব খাওয়াতে পারেন।


২.পুঁইশাক, লেটুস পাতা,মুরগির কলিজা,গাজর,মটরশুঁটি ইত্যাদি দিয়ে আপনি হাতে খাবার তৈরী করে খাওয়াতে পারেন।


৩.জলাধারে সপ্তাহে একদিন পুঁইশাক পাতা সিদ্ধ করে দিবেন এবং এক বা দুই কোয়া পরিমাণ রসুন ছেঁচে দিবেন এতে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং লেজের রঙ সুন্দর আসবে।


৪. কখনোই অতিরিক্ত খাবার একসাথে দিবেননা। নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার দিবেন যা ১০/১৫ মিনিটে খেয়ে শেষ করবে।বেশী পরিমাণ খাবার দিলে তা নিচে জমে যাবে এবং জলাধারের পানির পরিবেশ নষ্ট করবে এবং মাছের ক্ষতি করবে।

গাপ্পি মাছের ফ্রাই
ছবিঃ গাপ্পি মাছের ফ্রাই

বাচ্চা গাপ্পি মাছের খাবার

১. গাপ্পি মাছ জন্মের পরপরই খাবার সন্ধ্যান করে এজন্য আপনি তখন যে খাবারই দেন তা যেন মিহি গুড়ো হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে নাহলে মাছ খেতে পারবেনা।


২. বাজারে পাওয়া খাবারগুলোর মান দেখে নিবেন।পচা বা বাসি খাবার দিবেননা।দিলে সকল মাছ একসাথে মারা যাবার সম্ভবনা থাকবে।


৩. একসাথে বেশী খাবার দিবেননা।বেশী খবার দিলে তা যেমন অপচয় হবে তার চেয়ে বড় কথা হলো অতিরিক্ত খাবারটা জলাধারের নিচে জমে জলাধারের পরিবেশ নোংরা করবে।এজন্য ফ্রাই এর সংখ্যা ও প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে দুবেলা খাবার দিন পরিমাণমতো।তাহলে মাছও ভালো থাকবে সাথে জলাধারের পরিবেশও।


৪. সপ্তাহে একদিন পুঁইশাক পাতা বা লেটুস পাতা সিদ্ধ করে ব্লেন্ড করে দিবেন তাতে মাছের কালার ভালো আসবে।রসুন ছেঁচে দিলে পানির মান ভালো থাকবে।রোগ কম হবে।এরপরও রোগবালাই দেখা দিলে জেনে নিন তার লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ…

রেফারেন্স

গাপ্পি মাছ , গাপ্পি মাছ ২,

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

Fast & Free Delivery
Safe & Secure Payment
100% Money Back Guarantee
X