গোল্ডফিশের সাধারণ পরিচিতি
গোল্ডফিশ একটি স্বাদু পানির মাছ।গোল্ডফিশের আদিনিবাস চীন,পূর্ব এশিয়ার অংশবিশেষ। এই রঙিন একুরিয়াম মাছ তার বিভিন্ন জাত, আকার, দেহের আকৃতি এবং বৈচিত্র্যময় রঙ (সাদা, হলুদ, কমলা, লাল, বাদামী এবং কালো রঙের মিশ্রণ) এর জন্য সৌন্দর্যমনা মানুষদের একুরিয়াম মাছ হিসাবে পছন্দের তালিকায় থাকে সবার শীর্ষে। বর্তমান সময়ে একুরিয়াম মাছের মাঝে সর্বোচ্চ ব্যবহৃত একটি মাছ হলো এটি।
গোল্ডফিশ এর বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস
Kingdom: Animalia
Phylum: Chordata
Class: Actinopterygii
Order: Cypriniformes
Family: Cyprinidae
Sub family: Cyprininae
Genus: Carassius
Species: Carassius auratus
গাপ্পি মাছের আবাস,খাবার, প্রজনন ও একুরিয়াম সাজানোর কৌশল জানতে পড়ুন…
গোল্ডফিশের গঠন
গোল্ডফিশের দেহের আকার,আকৃতি,পাখনার ধরণ, শরীরের রঙের জন্য বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে।গোল্ডফিশের গায়ের রং সাধারণত সাদা, কালো, লাল, হলুদ, বাদামী এবং কমলা রঙের সংমিশ্রন হয়ে থাকে।এদের লেজ ও পাখনা বড় হয় এবং রঙের দিক দিয়ে উজ্জল লাল বা সোনালী হয়।
একুরিয়াম ফিস হিসাবে থাকলে এই মাছটি প্রায় ১ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে ছোট একুরিয়ামে মাছগুলো ১-২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয় তবে বড় একুরিয়ামে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। তবে মুক্ত পরিবেশে যেমন পুকুর বা বন্য অঞ্চলে এই মাছটি প্রায় ১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গোল্ডফিশের স্বভাব ও আবাস
গোল্ডফিশ সাধারণত নরম প্রকৃতির মাছ। অন্যান্য মাছের তুলনায় এরা বসবাসের জন্য স্বাদুপানির পরিবেশ পছন্দ করে। এদের বসবাসের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা ২০°-২২° সেলসিয়াস।
গোল্ডফিশ এর আয়ুষ্কাল
একুরিয়াম ফিস হিসাবে এই মাছটি ৭-৮ বছর বেঁচে থাকতে পারে।তবে অনূকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে গোল্ডফিশের আয়ু ৪০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ গাপ্পি মাছের সকল রোগসমূহ এর লক্ষণ,প্রতিকার ও প্রতিরোধ পদ্ধতি জানুন
গোল্ডফিশের মেল-ফিমেল চেনার উপায়
মেল ও ফিমেল মাছগুলো আলাদা করার জন্য প্রথমে মাছের আকৃতি খেয়াল করবেন তারপর মাছের পায়ুপথ এর আকৃতি খেয়াল করবেন।তাহলে খুব সহজেই গোল্ডফিশের মেল ফিমেল আইডেন্টিফাই করতে পারবেন।
মেল গোল্ডফিশ
মেল মাছদের দেখতে যেমন একটু সরু ও লম্বাটে আকারের হয় তেমনি এর পায়ুপথ কিছুটা সরু ও লম্বাটে হয়।
ফিমেল গোল্ডফিশ
ফিমেল বা স্ত্রী মাছদের দেখতে মোটা ও গোলাকৃতির হয় এবং ফিমেল গোল্ডফিশের পায়ুপথও একটু গোলাকার ও পুরু হয়।
গোল্ডফিশের জাতসংখ্যা
গোল্ডফিশের ২৫ ধরণের জাত দেখা যায় যা মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এক লেজ বিশিষ্ট , দুইলেজ বিশিষ্ট , ডর্সাল ফিন বা পৃষ্ঠীয় পাখনাবিহীন এই তিনটি ভিত্তির আওতায় ২৫ টি জাতকে ভাগ করা হয়েছে। জাতগুলো হলোঃ
এক লেজ ( Single finned) বিশিষ্ট গোল্ডফিশ
১.কমন
২.কমেট
৩.সাব আনকিন
৪.লন্ডন সাব-আনকিন
৫.আমেরিকান সাব-আনকিন
৬.ব্রিস্টল সাব-আনকিন
৭.নিম্ফ
আরোও পড়ুনঃ টাইগার বার্ব মাছ এর সকল অজানা তথ্য
দুই লেজ ( Single finned) বিশিষ্ট গোল্ডফিশ
১.ফ্যানটেইল
২.টোসাকিন
৩.কার্লড গিল
৪.ভেইল টেইল
৫.ওরান্ডা
৬.ব্ল্যাকমোর
৭.রিওকিন
৮.টেলিস্কোপ
৯.জিকিন
১০.পার্লস্কেল
১১.ওয়াকিন
১২.হোয়াইট টেলিস্কোপ
ডর্সাল ফিনলেস ( Dorsal Finless) গোল্ডফিশ
১.কেলেস্টিয়াল আই
২.বাবল আই
৩.লায়নহেড
৪.এগ
৫.রাঞ্চু
৬.পমপম
বিভিন্ন জাতের গোল্ডফিশ চেনার উপায়
১. কমন গোল্ডফিশ
কমন বা গোল্ডফিশ হলো মিক্স প্রজাতির যা সচরাচর বেশী দেখা যায়। কমন জাতের এই মাছের শরীরের রং সাদা, লাল, কালো, স্বর্ণালী, হলুদ বা কমলা হয়ে থাকে।
২. ব্ল্যাকমুর গোল্ডফিশ
ব্ল্যাক মুর প্রজাতির গোল্ডফিশ সহজেই আলাদা করা যায় কেননা এ জাতের মাছ এর চোখের পাতা ফুলে থাকে।এটাকে টেলিস্কোপ প্রজাতির মাছ ও বলা হয়।
৩. বাবলআই গোল্ডফিশ
বাবল আই সোনালী মাছ এর নাম থেকেই বোঝা যায় এদের চোখে হবে বাবলের মতো। এদের চোখ ছোট হয় এবং বাবলের মতো চোখে তরল জেলিপূর্ণ দুটি বড় থলি লক্ষ্য করা যায়।এদের চোখ দেখতে ফোলাফোলা লাগে।
বাকী প্রজাতির গোল্ডফিশ সম্পর্কে জানার জন্য পড়ুনঃ গোল্ডফিশ ও এর বর্তমান বাজারমূল্য
গোল্ডফিশের জন্য একুরিয়াম সেটাপ
১. এ জাতের মাছগুলো একুরিয়ামে পালনের জন্য একুরিয়াম মাঝারি থেকে বড় আকৃতির হতে হয় যেমন ৯ গ্যালন কিংবা ৪০ লিটার ( ১ গ্যালন= ৪.৫৪৬লিটার) এর বেশী পানি ধরবে এমন একুরিয়াম সেটাপ করা ভালো। এই আকৃতির একুরিয়ামে সোনালী মাছগুলো ভালো ভাবে থাকতে পারে এবং বৃদ্ধি ৬-৭ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে তবে এর চেয়ে ছোট একুরিয়ামে ১ থেকে ২ ইঞ্চি আকৃতির গোল্ডফিশ রাখতে পারবেন। একুরিয়াম এর আকৃতির উপর গোল্ডফিশের আকৃতি নির্ভর করে।
২. একুরিয়াম সেটাপে যে জিনিসটা মাথাশ রাখবেন সেটা হলো একুরিয়ামে সামুদ্রিক পরিবেশের একটা ভাইব আনতে হবে। এজন্য প্রচুর পরিমাণে প্লান্ট ও কালারলেস পাথর কিংবা বালি ইউজ করতে পারেন। তবে কৃত্রিম প্লান্ট ইউজ না করা বেটার।
৩. একুরিয়ামে পানির তাপমাত্রা ও পিএইচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।গোল্ডফিশ এর জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা হলো ৮° সেলসিয়াস হতে ২৬° সেলসিয়াস এবং পিএইচ ৬.৫-৮.৫ ।
৪. একুরিয়ামের পানির দূষনের মাত্রা কমানোর জন্য প্রতি সপ্তাহে পানির একটা নির্দিষ্ট অংশ পরিবর্তন করতে হবে। যেমন প্রতি ৭-১০ দিন পরপর একুরিয়ামের সমস্ত পানির ২০%-৩০% পানি ফেলে দিয়ে ওই পরিমাণের নতুন পানি এড করবেন।তবে পানি ফেলানোর সময় সবসময়ই একুরিয়ামের নিচের বা তলানির দিকের পানি ফেলার চেষ্টা করবেন এক্ষেত্রে নল দিয়ে পানি ফেলতে পারেন।
গোল্ডফিশের খাবার
গোল্ডফিশের খাবার উপাদানে প্রোটিন বা আমিষ এর পরিমাণ বেশী রাখবেন। এই জাতের মাছ তার নিজের ফ্রাই, অন্য মাছের ফ্রাই এমনকি পোকামাকড়ও খায়। এই মাছের জন্য ভাসমান খাবার উপাদান দিতে পারেন। বর্তমানে বাজারেও বিভিন্ন কোম্পানীর প্যাকেটজাত খাবার পাওয়া যায়।
আরোও পড়ুনঃ সকল জাতের গাপ্পি মাছের চেনার উপায় ও বাজার দাম জানুন
গোল্ডফিশ বিষয়ে কিছু মজাদার তথ্য
১. গোল্ডফিশের স্মৃতি শক্তি অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশী। কিছু রিসার্চ থেকে দেখা যায় তিনমাস পর্যন্ত এই মাছ কোনো বিষয় তার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করতে পারে। যেমন কেও যদি নিয়মিত খাবার দেয় কিংবা গোল্ডফিশের যত্ন নেয় তবে এই মাছটি তাকে মনে রাখতে পারে।
২. অন্যান্য মাছ বা প্রাণীর মতো এই মাছ তাদের জিহ্বা দিয়ে কোনো কিছুর স্বাদ নেয়না বরং তাদের ঠোঁট দিয়েই যেকোনো কিছুর স্বাদ উপলব্ধি করে।
৩. গোল্ডফিশের স্টোমাক বা পেট নেই যার ফলে এরা খাবার না খেয়েও ৩ সপ্তাহ বা ২১ দিন বেঁচে থাকতে পারে।
৪. গোল্ডফিশের চোখের পাতা নাই তাই এরা চোখ খোলা রেখে ঘুমায়।
৫. গোল্ডফিশের দাত থাকে গলার পেছনে।
৬. এই জাতের মাছগুলো সাধারণত একুরিয়ামে ৬-৭ ইঞ্চি এবং প্রাকৃতিক জলাশয়ে ১৪ ইঞ্চি হলেও আজ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় গোল্ডফিশটি ছিলো একটি বিড়ালের সমান।
রেফারেন্স
আরোও পড়ুন