একুরিয়ামের মাছের যত্ন -কীভাবে নিলে আর মাছ মরবেনা

একুরিয়ামের মাছের যত্ন -কীভাবে নিলে আর মাছ মরবেনা

একুরিয়ামের মাছ কেন মারা যায়?

যারা নতুন নতুন একুরিয়াম নেয় তাদের একুরিয়ামের মাছের যত্ন বিষয়ে তেমন জ্ঞান না থাকায় তাদের পক্ষে প্রাথমিক ভাবে একুরিয়ামে মাছের বসবাস উপযোগী ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরী করা বা বজায় রাখা দুটোই কষ্টসাধ্য কাজ। ফলে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নতুন একোয়ারিস্টদের বলতে শোনা যায় তাদের নতুন একুরিয়ামে মাছ মারা গেছে বা পানি ঘোলা হচ্ছে।আসলে এসবের মূল কারণগুলো হতে পারে-

  • পানির তাপমাত্রা, পিএইচ,খরতা সঠিক না থাকা।
  • অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার দেয়া।
  • পানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখা।অসুস্থ মাছ রাখা।
  • পানিতে অক্সিজেনের সরবরাহ না রাখা।
  • অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণ মাছ রাখা।

তবে একুরিয়ামের এই কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে মাছ মারা যাওয়া কিংবা পানি ঘোলা হওয়া সমস্যাগুলোর সম্মুখীন আর হতে হবেনা ।

আজ আমরা একুরিয়ামের মাছের যত্ন নিয়ে বিশদভাবে জানবো-

একুরিয়াম সেটাপের মূল দিকসমূহ –

একুরিয়ামের মাছের যত্ন কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যা নিচে আলোচনা করা হলো-

একুরিয়ামের আকার ও স্থান নির্ধারণ

  • একুরিয়ামের আকার নির্ভর করবে আপনার বাসার জায়গা, আপনি কতকসংখ্যক ও কি আকারের মাছ রাখবেন তার উপর।
  • জায়গা যদি সমস্যার কারণ না হয় তবে ৩৫-৪০ লিটার পানি ধরবে এমন একুরিয়াম নেয়া ভালো।এতে আপনি পর্যাপ্ত জীবন্ত উদ্ভিদ, ফিল্টার সহ ভালো পরিমাণ মাছের জাত রাখতে পারবেন। তবে বড় ধরণের মাছ রাখলে অল্প পরিমাণে মাছ রাখা যাবে।
  • একুরিয়াম কখনোই এমন স্থানে রাখবেননা যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে কিংবা এসির সরাসরি নিচেও রাখবেননা এতে পানি অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা হয়ে মাছের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।

আরোও পড়ুনঃ বিভিন্ন জাতের গাপ্পি মাছের দাম

একুরিয়ামের মাছের যত্ন

একুরিয়ামের পানির মান ঠিক রাখতে হবে

একুরিয়ামে মাছ রাখার জন্য পানির তাপমাত্রা, খরতা, লবণাক্ততা, পিএইচ বজায় রাখতে হবে। যদিও মাছভেদে এসবের মানের তারতম্য আছে। পানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। একুরিয়ামের পানির তাপমাত্রা, পিএইচ ও খরতা কেমন হবে জেনে নেয়া যাক-

পানির তাপমাত্রা

  • একুরিয়ামের মাছের জন্য তাপমাত্রা অত্যন্ত বড় প্রভাবক।কেননা একুরিয়ামের পানির তাপমাত্রা কম বা বেশী হলে মাছের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
  • পানির তাপমাত্রা এমন হতে হবে যেন তা মাছ এবং একুরিয়ামের জীবন্ত গাছের জন্য আরামদায়ক হয়।
  • সাধারণত একুরিয়ামের মাছের জন্য পানির তাপমাত্রা  ২৭°-৩০° সেলসিয়াস হওয়া ভালো।
  • অনেক মাছ এর চেয়ে কম বা বেশী তাপমাত্রায় থাকতে পারে।যেমনঃ গোল্ডফিস, গাপ্পি, মলি, প্লাটি মাছ ২৫°-৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ও বাঁচতে পারে।

পানির পিএইচ

  • পিএইচ হচ্ছে মূলত পানিতে দ্রবীভূত হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ। এর দ্বারা পানির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব মাপা হয়।
  • একুরিয়ামের ক্ষেত্রে সাধারণত স্বচ্ছ পানির মাছের জন্য পিএইচ ৬.৫-৬.৮ আর লবণাক্ত পানির মাছের জন্য পিএইচ ৭.৬-৮.৪।
  • কয়েক প্রজাতির মাছ একসাথে রাখার জন্য পানির পিএইচ লেভেল ৭-৮ এর মাঝে রাখাই উত্তম।
  • পানির পিএইচ মাপার জন্য বাজারে বিভিন্ন পিএইচ টেস্ট কিট পাওয়া যায়। ৭ হচ্ছে নিরপেক্ষ পিএইচের মান, এর কম হলে তা অম্লীয় আর বেশী হলে তা ক্ষারীয়।

আরোও পড়ুনঃ গোল্ডফিশ এর একুরিয়াম সেটাপ ও খাদ্য

পানির খরতা

  • পানিতে অধিক পরিমাণে দ্বিধনাত্মক ক্যাটায়ন ( যেমনঃ Mg2+ , Ca2+, Fe2+ আয়নসমুহ ) উপস্থিত থাকলে, পানিতে এক বিশেষ ধর্মের সৃষ্টি হয় যা পানির ক্ষরতা ধর্ম নামে পরিচিত।
  • পানযোগ্য পানির খরতা ৬-৮.৫ ডিজিএউচ। এই খরতার পানি একুরিয়ামের মাছের জন্যও উপযুক্ত।

পানি পরিবর্তন

  • একুরিয়ামে প্রাথমিকভাবে আপনি ফিল্টার করা বা কাঁচা পানি দিয়ে কয়েকদিন এমনি রেখে দিন তারপর মাছ ছাড়লে সমস্যা হবেনা। আর যদি ক্লোরিন মিশ্রিত পানি দিয়ে ওইদিনই মাছ ছাড়েন তাহলে মাছ মরার সম্ভাবনা থাকবে।
  • প্রতি  দুসপ্তাহ পরপর একুরিয়ামের ৩০/৪০ ভাগ ফেলে দিয়ে নতুন পানি যোগ করতে হবে।এক্ষেত্রে একুরিয়ামের নিচের দিকের পানি পরিবর্তন করাটা উত্তম।
  • পানি পরিবর্তনের পাশাপাশি একুরিয়ামের কাচগুলো পরিষ্কার রাখবেন। এলগি এর গ্রোথ বেশী হলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

একুরিয়ামের মাছের যত্ন
Aquarium fish care

পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ

  • মাছ যেহেতু পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন দ্বারা শ্বাসকার্য করে।তাই পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ পর্যাপ্ত হতে হবে।
  • বাজারে বিভিন্ন এয়ার পাম্প পাওয়া যায়। এগুলা ব্যবহার করতে পারেন।
  • খাবার দেয়ার সময় এয়ার পাম্প বন্ধ করে খাবার দিবেন নাহয় পানির ফ্লো তে মাছ খাবার খুঁজে পাবেনা।

আরোও পড়ুনঃ গাপ্পি মাছের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার

মাছের পরিমাণ

  • মাঝারি সাইজের একুরিয়ামে চারভাগের তিন ভাগ পানি পূর্ণ করলে প্রাথমিকভাবে ৮-১০ টি মাছ আর বড় একুরিয়াম এ ১৬-২০ টি মাছ রাখা ভালো।
  • মাছ আকারে বড় হলে মাছের পরিমাণ কিছু কমবে।
  • যদি একুরিয়াম এ জীবন্ত গাছ লাগানো হয় এবং পানি পরিষ্কার রাখা যায় তবে মাছের পরিমাণ বাড়ালেও সমস্যা হবেনা।

একুরিয়ামের পানির সাথে নতুন মাছকে খাপ খাওয়ানো

  • একুরিয়ামের মাছগুলো সাধারণত দোকানে অনেক দিন থাকে যার ফলে ওই পানির সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয়।তারপর হুট করেই যখন নতুন পরিবেশে এনে ছেড়ে দেয়া হয় তখন ধকল সইতে না পেরে কিংবা মানিয়ে নিতে না পেরে মারা যায়।
  • এজন্য মাছ একুরিয়ামে ছাড়ার পূর্বে কিনে আনা মাছের ব্যাগে অল্প অল্প পরিমাণে কয়েকবার একুরিয়ামের পানি দিয়েন মাছকে কিছুটা অভ্যস্ত করে একুরিয়ামে ছাড়লে আর সমস্যা হবে নাহ।
  • মাছ একুরিয়ামে রাখার সময় খেয়াল করে নিবেন মাছগুলো রোগাক্রান্ত কিনা।

একুরিয়াম সাজানোর উপাদানসমূহ

  • আমরা একুরিয়াম কেনার সময়ই একুরিয়াম সাজানোর উপাদানসমূহও কিনি।যেমনঃ রঙবেরঙের পাথর, বালি, প্লান্ট ইত্যাদি।
  • এসব উপাদানসমূহ অনেক সময় আপনার একুরিয়ামের পানি নষ্ট করা ও মাছ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।কেননা এসব উপাদানে ক্যামিকেল বা রাসায়নিক পদার্থ থাকে।
  • তবে রঙবেরঙের পাথর বা বালি না নিয়ে সাধারণ রঙের পাথর ও চিকন বালি ব্যবহার করতে পারেন।
  • একুরিয়ামে কখনো প্লাস্টিকের গাছ ব্যবহার করবেননা, একুরিয়ামে সর্বদা আপনি জীবন্ত গাছ ব্যবহার করবেন যা আপনার একুরিয়ামের পানি ঠান্ডা রাখবে, ফ্রাই এর লুকানোর জায়গায় দিবে পাশাপাশি পানিকে ঠান্ডা রাখবে।

আরোও পড়ুনঃ টাইগার বার্ব মাছের জন্য একুরিয়াম সেটাপ জেনে নিন

একুরিয়ামে সঙ্গী মাছ নির্ধারণ

  • একুরিয়ামে কোন মাছের সাথে কোন ধরনের মাছ রাখা যাবে তা জানতে হবে নাহলে পস্তাতে হবে।
  • অনেক মাছের লেজ অনেক নরম এবং পাতলা ধরণের হয় তাই এসব মাছের সাথে এমন মাছ রাখা যাবেনা যেসব মাছ লেজ ঠোকরায় যেমন কার্প বা টাইগার বার্ব।
  • ছোট মাছের  সাথে ছোট আকারের মাছ রাখবেন যেমনঃ গাপ্পি, মলি, প্লাটি, টেট্রা, হারলি কুইন, পিকক রেইনবো ইত্যাদি হলো ছোট আকারের মাছ।
  • ছোট মাছের সাথে একুরিয়ামে কখনোই প্যারট, কার্প,গোল্ড ফিশ, ফায়ার মাউথ, অ্যারাডাস, অস্কার, অ্যান্জেল, সিভোরাম, গ্রীন ট্যারর, সিক লিড ও জুয়েল সহ বড় আকার বা ঠোকরানো বা আক্রমণাত্নক স্বভাবের মাছ রাখা যাবেনা।

একুরিয়ামের মাছকে অতিরিক্ত খাবার দেয়া যাবেনা

  • একুরিয়ামের মাছের জন্য ফ্রোজেন,শুকনো কিংবা টাটকা ভালো মানের খাবার দেয়া আবশ্যক।
  • খাবার সবসময়ই মাছের পরিমাণ অনুযায়ী দিতে হবে যা তারা ৫-৭ মিনিটের মাঝে খেয়ে শেষ করতে পারবে।
  • বেশী পরিমাণে খাবার দিলে তা একুরিয়ামের নিচে জমে থাকবে এবং একুরিয়ামের পানি দূষিত করবে।
  • একুরিয়ামের পানি দূষিত হলে তা মাছের মৃত্যুর কারণ হবে কিংবা বিভিন্ন রোগবালাই সৃষ্টি করবে।

শীতকালে একুরিয়ামের মাছের যত্ন

  • শীতকালে একুরিয়ামের প্লান্ট কিছু কমিয়ে দিন।
  • একুরিয়ামের উপরে ঢাকনা ব্যবহার করেন যাতে ঠান্ডা বাতাস না ঢোকে।
  • একুরিয়ামের আকার অনুযায়ী ওয়াটার হিটার ব্যবহার করেন তবে এক্ষেত্রে তাপমাত্রা পরিমাপক কিট দ্বারা তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
  • পানি পরবর্তনে সতর্ক থাকতে হবে, একবারে বেশী পরিমাণ পানি পরিবর্তন করা যাবেনা।
  • মাছে কোনো রোগবালাই দেখা দেয়া মাত্রই রোগাক্রান্ত মাছকে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

আরোও পড়ুনঃ গাপ্পি মাছের প্রজনন ও বাচ্চা গাপ্পি মাছের খাবার

গ্রীস্মকালে একুরিয়ামের মাছের যত্ন

  • শীতকালের তুলনায় গ্রীস্মকালে একুরিয়ামের মাছের যত্ন নেয়া তুলনামূলক সহজ।
  • যে ঘরে এসি চলে সে ঘরে একুরিয়াম থাকলে তেমন সমস্যা হবে না।
  • একুরিয়ামের ঢাকনা খোলা রাখুন,সম্ভব হলে একুরিয়াম ফ্যান ব্যবহার করুন।
  • একুরিয়ামের সাইজ অনুযায়ী জীবন্ত গাছের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
  • মাছের খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখুন, যেসব খাবার মাছের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ওইসব খাবার দিন যেমনঃশসা।অক্সিজেনের ঘাটতি যাতে না হয় এজন্যই দিনের বেশীরভাগ সময় এয়ার পাম্প অন রাখুন।
  • নিয়মিত (১৪/১৫ দিন পরপর) মোট পানির ৩০/৪০ ভাগপানি পরিবর্তন করুন।

আরোও পড়ুন

Summary
একুরিয়ামের মাছের যত্ন
Article Name
একুরিয়ামের মাছের যত্ন
Description
একুরিয়ামের মাছের যত্ন কিভাবে নিতে হবে সে বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় নতুন একুরিয়াম কেনার পরপরই অনেক মাছ মারা যায়,পানি ঘোলা সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।তাই জেনে নিন একুরিয়ামের মাছ ও পানির যত্ন নেয়ার উপায়
Author
Publisher Name
Animalia BD
Publisher Logo

Leave a Comment

Fast & Free Delivery
Safe & Secure Payment
100% Money Back Guarantee
X